শুরুর কথা: স্যর
কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস সিরিজের ৫৬টি ছোটগল্পের মধ্যে এই গল্পটির কিছু
বিশেষত্ব আছে। সাধারণতঃ শার্লক কাহিনী আমরা ডাক্তার ওয়াটসনের মুখেই শুনে
এসেছি। কিছু ক্ষেত্রে শার্লক হোমস নিজেও কাহিনীর বিবরণী দিয়েছেন, কিন্তু এই
কাহিনীটি সবার থেকে আলাদা। কারণ এখানে একজন তৃতীয় কোনো মানুষ গোটা
কাহিনীটি বলছেন। প্রকৃতপক্ষে এই কাহিনীটি মঞ্চে অভিনয়ে করার জন্য স্যর
কোনান ডয়েল লিখেছিলেন। পরবর্তীকালে এটি ছোটগল্প হিসেবে স্থান পায়। সে জন্যই
এরকম কথনশৈলী।]
© দীপ্তজিৎ মিশ্র
২২১,
বি বেকার স্ট্রীটের দোতলার সেই অপরিচ্ছন্ন ঘরে ফিরে আসতে পেরে ডাক্তার
ওয়াটসনের ভালো লাগছিল। এই ঘর থেকেই বহু স্মরনীয় অভিযানের সূচনা হয়েছিল।
তিনি বারবার দেখছিলেন ঘরের দেওয়ালে টাঙ্গানো বৈজ্ঞানিক চার্ট, অ্যাসিডে
পোড়া টেবিল, ঘরের এককোণে পড়ে থাকা স্ট্রাডিভোরাস বেহালার বাক্স, কয়লা রাখার
পাত্র, যেখানে চিরাচরিতভাবে আছে পাইপ ও তামাক। অবশেষে তাঁর চোখ গেল
হাস্যরত বিলির দিকে। বিলি যেকোনো কাজে খুবই পারদর্শী। বলাই বাহুল্য,
স্বভাবগম্ভীর শার্লক হোমসের জীবনে ডাক্তার ওয়াটসনের অভাব অনেকটাই পূরণ
করেছিল এই বিলিই।
"সবকিছুই তো অপরিবর্তিত র্যেছে বিলি! এমনকি তুমিও। আশা করি একই কথা তার জন্যেও বলতে পারা যায়?"
বিলি খানিকটা উদ্বেগ নিয়ে শোবার ঘরের দিকে তাকালো।
"আমার ধারণা তিনি এখনও ঘুমোচ্ছেন।" সে বললো।
গ্রীষ্মকালে
সময়টা তখন সাতটা। ডাক্তার ওয়াটসন খুব একটা অবাক হলেন না। কারণ তিনি খুব
ভালো মতোই জানতেন যে তাঁর বন্ধুর সময়জ্ঞান একেবারেই নেই।
"তার মানে নিশ্চয়ই কোনো নতুন কেস?"
"হ্যাঁ
স্যর। উনি এটার জন্য খুব খাটছেন। আমি ওঁর স্বাস্থ্য নিয়ে খুবই চিন্তিত।
তিনি আগের চেয়ে আরও রোগা আর ফ্যাকাশে হয়ে গেছেন। মিসেস হাডসন তাঁকে রাতের
খাবারের কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাতে তিনি বললেন, 'আগামী পরশু সন্ধ্যে সাড়ে
সাতটায় রাতের খাবার খাবো।' আপনি তো জানেন, যখন একটা কেসের মধ্যে উনি ঢুকে
যান, তখন এরকমই করেন।"
"হ্যাঁ, জানি।"
"উনি
কাউকে অনুসরণ করছেন। গতকাল এক মজুর সেজে কাজ খুঁজতে বেরিয়ে গেছিলেন। আজ
সেজেছিলেন এক বুড়ি। আমি ওঁর পরিকল্পনাগুলো জানতে পারছি কারণ উনি এবারে
আমাকেও এই কাজে লাগিয়েছেন।" দাঁত বের করে হাসতে হাসতে সে সোফাতে হেলান দিয়ে
রাখা একটা ছাতা দেখিয়ে বললো, "ঐটা বৃদ্ধার ছদ্মবেশের একটা অংশ।"
"কিন্তু বিলি, এত সব কিসের জন্য?"
বিলি তার গলাটা নামিয়ে নিয়ে বললো, "আপনাকে বলতে বাধা নেই স্যর, কিন্তু কথাটা যেন পাঁচকান না হয়। এটা সেই রত্নমুকুটের ব্যাপার।"
"সেকী! --- সেই একলক্ষ পাউন্ডের মুকুট চুরি?"
"হ্যাঁ
স্যর। ওঁদের ওটা ফেরত চাই-ই। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ও হোম সেক্রেটারি
এসেছিলেন। এই সোফাতেই তাঁরা বসেছিলেন। মিঃ হোমস ওঁদের সঙ্গে খুবই নম্র
ব্যবহার করেছেন। তিনি কথা দিয়েছেন তাঁর যথাসাধ্য তিনি করবেন। এছাড়া লর্ড
ক্যান্ট্লমেয়ার ---"
"উফ!"
"হ্যাঁ
স্যর, আপনি জানেন লোকটি কেমন একগুঁয়ে। ওঁর ঔদ্ধত্য আমি সহ্য করতে পারি না।
মিঃ হোমসও পারেন না। স্যর, আপনি জানেন, উনি হোমসকে অবিশ্বাস করেন এবং
তাঁকে নিয়োগ করার বিরুদ্ধে ছিলেন। স্যর একাজ পারবেন না বলেই লর্ডের
বিশ্বাস।"
"হোমস জানে এটা?"
"মিঃ হোমস যা যা জানা উচিত, তার সবই জানেন।"
"বেশ, আশা করি সে সফল হবে এবং লর্ড ক্যান্ট্লমেয়ার তাতে বিস্মিত হবেন। কিন্তু বিলি, জানলাতে ঐ পর্দাটা লাগানো আছে কেন?"
"মিঃ হোমস এটা দিনতিনেক আগে লাগিয়েছেন। ওর পেছনে একটা মজার জিনিষ আছে।"
বিলি
এগিয়ে গিয়ে পর্দাটা তুলে দিতেই ডাক্তার ওয়াটসন বিশ্ময়ে চিৎকার করে উঠলেন।
সেখানে তাঁর বন্ধুর একটা ড্রেসিং গাউন পরানো প্রতিমূর্তি আর্মচেয়ারে বসানো।
মাথাটা নীচের নামানো যাতে মনে হয় তিনি কোনো বই পড়ছেন। বিলি মূর্তিটার
মাথাটা খুলে হাতে নিলো।
"আমরা এটাকে
বিভিন্নভাবে বসাই যাতে মূর্তিটা আরো জীবন্ত মনে হয়। আমি খড়খড়িটা নামানো না
থাকলে এতে হাত দিতে সাহস করতাম না। খড়খড়িটা খোলা থাকলে রাস্তার ওপার থেকে
এটা দেখা যায়।"
"আমরা এর আগে এরকম আরও একবার করেছিলাম।"
"তার
মানে সেটা আমি আসার আগে", বিলি বলল। সে জানলার পর্দাটা খানিকটা তুলে
রাস্তার দিকে তাকালো। "কিছু লোক আমাদের ওপর নজর রাখছে। আমি একজনকে জানলা
থেকে দেখতে পাচ্ছি। আপনিও দেখুন না একবার!"
ওয়াটসন
এক পা এগিয়ে যেতেই শোবার ঘরের দরজা খুলে হোমসের রোগা, লম্বা চেহারাটা
আবির্ভূত হল। তাঁর শানানো মুখটা ফ্যাকাশে হলেও তাঁর পদক্ষেপ এবং চালচলন
আগের মতোই সক্রিয়। এক লাফে তিনি জানলার সামনে এসে খড়খড়ি নামিয়ে দিলেন।
"এইরকমই
থাক, বিলি," তিনি বললেন। "তুমি এতক্ষণ খুব বিপদের মধ্যে ছিলে হে ছোকরা,
এসব থেকে দূরে থাকো। তোমায় ছাড়া আমার কোনো কাজ হবে না। বেশ বেশ ওয়াটসন,
পুরোনো আড্ডায় তোমাকে দেখে বেশ লাগছে। কিন্তু তুমি যে খুব ঝামেলার সময় এসে
পড়েছো।"
"সে বুঝতেই পারছি।"
"তুমি
এখন যেতে পারো বিলি," বিলি চলে গেলে হোমস বললেন, "ছেলেটা একটা সমস্যা
ওয়াটসন। কতদূর পর্যন্ত আমি ওকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে পারি?"
"কীসের বিপদ হোমস?"
"হঠাৎ মৃত্যুর হে, হঠাৎ মৃত্যুর। আমি আজ সন্ধ্যেয় একটা কোনো ঘটনা ঘটার আশা রাখছি।"
"কীরকম?"
"ওয়াটসন, আমি খুন হয়ে যেতে পারি আজ।"
"না না হোমস, তুমি ঠাট্টা করছো!"
"যদিও
আমার রসবোধ সীমিত, তবে এর চেয়ে অনেক বেশি ভালো ঠাট্টা আমি করতে পারি। যাই
হোক। কিন্তু তার মধ্যে আমরা একটু আরাম করতে পারি না কী? অ্যালকোহল চলবে?
গ্যাসোজেন ও চুরুট আগের জায়গাতেই আছে। আমি তোমাকে তোমার আগের আর্মচেয়ারেই
দেখতে চাই। আশা করি তুমি আমার অনর্গল পাইপ ও কড়া তামাককে ঘৃণা করতে শেখোনি।
এগুলো এখন আমার রোজকার খাদ্যের স্থান দখল করেছে।"
'কিন্তু, কেন?"
"খালিপেটে
থাকলে মস্তিষ্ক ভালো কাজ করে। বন্ধু ওয়াটসন, ডাক্তার হওয়ার সুবাদে তোমার
জানা উচিত যে শরীরে পাচনের ফলে যতখানি তোমার রক্ত পুষ্ট হয়, ঠিক ততটাই
ক্ষতিগ্রস্ত হয় তোমার মস্তিষ্কের পুষ্টি। আমি নিজেই একটা মস্তিষ্ক। আমার
শরীরের বাকি অংশটা একটা অকেজো অ্যাপেনডিক্স মাত্র। সে জন্য মস্তিষ্কের
পুষ্টিটাই আমায় দেখতে হবে।"
"কিন্তু তোমার এই বিপদ, হোমস?"
"হ্যাঁ,
যদি এটা ঘটে, তাই তোমার আগেভাগে খুনীর নাম-ঠিকানা জেনে রাখা ভালো, যাতে
তুমি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে তা দিয়ে ওদের তদন্তে সাহায্য করতে পারো। লোকটার
নাম সিলভিয়ুস --- কাউন্ট নেগ্রিটো সিলভিয়ুস। লিখে নাও হে বাপু, লিখে নাও!
১৩৬, মূরসাইড গার্ডেন্স, এন. ডব্লিউ... হয়েছে?"
ওয়াটসনের
মুখ চিন্তান্বিত হয়ে গেলো। একমাত্র তিনিই জানেন হোমস যতটা বলেন তার চেয়ে
বিপদের ভয়াবহতা অনেকটা বেশি হয়। ওয়াটসনই চিরকাল হোমসের হয়ে কাজের উপযোগী
হিসেবে উপনীত হয়েছেন যেখানে খুব প্রয়োজন ছাড়া হোমস নিজে কোনো ভূমিকা নিতেন
না।"
"আমিও তোমার সঙ্গে থাকতে চাই হোমস। ইদানিং আমার হাতে কোনো বিশেষ কাজ নেই।"
"তুমি
শুধরোলে না ওয়াটসন। অন্যান্য দোষের সঙ্গে আজকাল মিথ্যে বলাও ধরেছো। তোমাকে
দেখলেই একজন ব্যস্ত ডাক্তারের ছাপ বোঝা যায় যার কাছে ঘন্টায় ঘন্টায়
রোগীদের বাড়ি থেকে ডাক আসছে চিকিৎসার জন্য।"
"খুব একটা জরুরী না। কিন্তু, তুমি কী এই সিলভিয়ুস লোকটিকে গ্রেপ্তার করতে পারো না?"
"হ্যাঁ। নিশ্চয়ই আমি পারি। সে জন্য সে নিজেও খুব চিন্তিত।"
"তবে তা করছো না কেন?"
"কারণ হীরেটা কোথায় আছে সেটা আমি জানিনা।"
"হ্যাঁ, বিলি বলছিল বটে এই হীরের কথা।"
"হলদে
ম্যাজারিন মণি। আমি জাল ফেলেছিলাম, জালে মাছ ধরাও পড়েছে। কিন্তু আমি
হীরেটা পাইনি। ওদের ধরে কী লাভ? এদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলে পৃথিবীটা আগের
তুলনায় ভালো হবে। কিন্তু সে জন্য তো আমি কাজে লাগিনি। আমার ওই মণিটা চাই।"
"আর এই কাউন্ট সিলভিয়ুস তোমার মাছ?"
"হ্যাঁ।
ও একটা হাঙ্গর। ও কামড়ে দেয় বিপদ বুঝলে। ওর সঙ্গী স্যাম মার্টন বক্সার।
স্যাম লোকটি মন্দ না, কিন্তু কাউন্টের কথায় চলে। ও হাঙ্গর না, একটা
মাথামোটা ভেটকী মাছ। আমার জালে ও এখন খলবল করছে।"
"এই কাউন্ট সিলভিয়ুস এখন কোথায়?"
"সারা
সকালটা আমি ওর পিছনে ছিলাম। তুমি আমাকে বৃদ্ধার ছদ্মবেশে দেখেছ ওয়াটসন,
কিন্তু এর চেয়ে ভালো ছদ্মবেশ এর আগে আমি নিই নি। কাউন্ট একবার আমার ছাতা
তুলে দিয়ে ওর অর্ধ-ইতালীয় উচ্চারণে সৌজন্যও জানালো। ভালো মনে থাকলে ওর
মধ্যে দক্ষিণের ভদ্রোচিত ব্যবহার দেখা যায়, কিন্তু রেগে গেলে শয়তান জেগে
ওঠে ওর মধ্যে। জীবন বড়ই অদ্ভূত হে ওয়াটসন!"
"তুমি ধরা পড়ে যেতে পারতে!"
"হয়তো।
আমি ওকে অনুসরণ করে মাইনরিতে স্ট্রবঞ্জির কারখানায় গেছিলাম। স্ট্রবঞ্জি
এয়ারগান তৈরী করে --- খুবই সূক্ষ্ম হাতের কাজ। আমার বিশ্বাস জানলার ওপারেও
ওরকম একটা বন্দুক তাক করা আছে। তুমি কী মূর্তিটা দেখেছো? ও হ্যাঁ! বিলি তো
তোমায় দেখালো। ওই মূর্তির সুন্দর মাথায় যেকোনো মূহুর্তে একটা গুলি ঢুকে
যেতে পারে। এই যে বিলি! কী ব্যাপার?"
বিলি ঘরে ফিরে এসেছিল ট্রে-র ওপর রাখা একটা কার্ড নিয়ে। হোমস তার দিকে ভ্রু তুলে তাকিয়ে বিস্ময়ের হাসি হাসলেন।
"লোকটা
নিজে! আমি এটা ভাবতেই পারিনি। বড্ড দুহসাহস হে ওয়াটসন! তুমি হয়তো শিকারী
হিসেবে লোকটির নাম শুনে থাকবে। সে যদি তার শিকারের ঝুলিতে আমাকেও পুরে
ফেলে, তাহলে অবশ্যই আমিই তার অসাধারণ শিকারজীবনের শেষ শিকার হবো। তবে
হ্যাঁ, সে যে বুঝতে পেরেছে যে আমি ওর ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছি, এটাই তার
প্রমাণ।"
"পুলিশকে ডেকে পাঠাও!"
"ডাকবো। কিন্তু এখনই না। একবার জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখো তো ওয়াটসন, রাস্তায় কাউকে ঘোরাফেরা করতে দেখতে পাও কী না!"
ওয়াটসন উঁকি মেরে দেখলেন।
"হ্যাঁ। দরজার কাছে একজন রুক্ষ মতো লোক দাঁড়িয়ে আছে।"
"ওই হলো স্যাম মার্টন --- বিশ্বাসী, কিন্তু নির্বোধ। এই ভদ্রলোক কোথায় বিলি?"
"ওয়েটিং রুমে স্যর!"
"যখন আমি বেল বাজাবো, ওঁকে ওপরে পাঠিয়ে দিও।"
"আচ্ছা স্যর।"
"আমি ঘরে না থাকলেও ওঁকে বসাবে।"
"হ্যাঁ স্যর।"
ওয়াটসন দরজা বন্ধ হতেই বন্ধুর দিকে ঘুরলেন।
"হোমস, খুব বেশি ঝুঁকি নেওয়া হয়ে যাচ্ছে। লোকটি খুব বেপরোয়া। ও হয়তো তোমায় খুন করতেই এসেছে!"
"আমি তাতে অবাক হবো না।"
"আমি তোমার সঙ্গেই থাকবো।"
"তাতে তুমি বিচ্ছিরিভাবে পরিকল্পনার পথ আটকাবে।"
"কার? ঐ লোকটির?"
'না বন্ধু, আমার।"
"বেশ, কিন্তু তোমায় একা রেখে আমি যেতে পারি না।"
"হ্যাঁ,
তুমি পারো ওয়াটসন। আর তুমি তা করবেও। কারণ আজ অবধি কোনো খেলায় তুমি হারো
নি। আমি নিশ্চিত যে তুমি এটাও শেষ অবধিই খেলবে। এই লোকটি হয়তো নিজের
প্রয়োজনে এসেছে, কিন্তু এই ঘরে সে থাকবে আমার প্রয়োজনে।" হোমস তাঁর
নোটবুকটি নিয়ে তাতে কয়েক লাইন লিখে কাগজটা ওয়াটসনকে দিয়ে বললেন, "একটা
হ্যান্সম ক্যাব ধরে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে চলে যাও। ওখানে গিয়ে সি.আই.ডি.-র
ইউঘালকে এটা দিয়ে পুলিশ নিয়ে ফিরে আসবে। তারপর এই লোকটি গ্রেফতার হবে।"
"সানন্দে।"
"তোমার
ফিরে আসার আগে আমি যথেষ্ট সময় পাবো হীরেটা কোথায় আছে জানার জন্য।" তিনি
বেলটা বাজালেন। "আমার মনে হয় আমাদের শোবার ঘরে যাওয়া উচিত। বাইরে বেরোনো র
ওই দ্বিতীয় পথটা সত্যিই খুব সুবিধেজনক। আমি আমার হাঙ্গরকে নিজে দেখা না
দিয়ে দেখতে চাই। আর তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে, সেটা করার জন্য আমার নিজস্ব
রাস্তা আছে।"
এর
একমিনিট পরেই বিলি কাউন্ট সিলভিয়ুসকে ঐ ফাঁকা ঘরে তার আসন দেখিয়ে দিলো।
কৃষ্ণবর্ণ, নামকরা খেলোয়াড় ও শিকারী এই ভদ্রলোকের ভয় ধরানো কালো গোঁফের
তলায় সরু ঠোঁটের আগায় লেগে থাকা নিষ্ঠুর হাসির সঙ্গে ঈগলের ঠোঁটের মতো
বাঁকানো নাক আরো বেশি ভয়ের উদ্রেক করে। তাঁর ভদ্রপোশাকের সঙ্গে তাঁর
নেকটাই, টাইপিন, এবং আংটিগুলিও ঝলমল করছিল। পিছনের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার
সঙ্গে সঙ্গে প্রতি সতর্ক পদক্ষেপে ফাঁদ খুঁজতে লাগলেন। তারপর জানলায় অবিচল
ড্রেসিং গাউন পরিহিত মূর্তিটির মাথা দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলেন। প্রথমে
মূর্তিটা দেখে অবাক হয়ে গেলেও তারপরই তাঁর কালো খুনী চোখে এক ভয়ংকর আশা
ঝিলিক দিল। তিনি আরেকবার ঘরের চারপাশটা দেখে নিলেন কোনো সাক্ষী আছে কিনা
দেখার জন্য। তারপর পা টিপে টিপে তাঁর মোটা ওয়াকিং স্টিকটা তুলে মূর্তিটার
দিকে এগিয়ে গেলেন। যখন মূর্তিটায় আঘাত করার জন্য উনি লাঠিটা তুলছেন, তখনই
শোবার ঘরের খোলা দরজা থেকে এক ঠান্ডা বিদ্রুপাত্মক গলা ভেসে এলো --- "ওটাকে
ভাঙবেন না কাউন্ট! ভাংবেন না।"
আততায়ী
কাঁপতে কাঁপতে পিছিয়ে এলেন। তাঁর মুখে আক্ষেপ মাখানো বিস্ময়। আর একবার তিনি
তাঁর লাঠিটা তুললেন, মূর্তির বদলে আসল মানুষটিকে মারার জন্য। কিন্তু ঐ
কঠিন ধূসর চোখ ও বিদ্রূপাত্মক হাসিতে এমন কিছু ছিল, যার জন্য তাঁর লাঠিটা
নীচে নেমে এলো।
"ছোট্ট জিনিষ," হোমস
মূর্তিটার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললেন, "ফরাসী মূর্তি নির্মাতা তাভের্নিয়ের
এটা বানিয়েছেন। আপনার বন্ধু স্ট্রবঞ্জীর যেমন এয়ারগান তৈরীতে দক্ষ, ইনি
দক্ষ মোমের কাজে।"
"এয়ারগান, স্যর! আপনি কী বলতে চান?"
"আপনার
টুপি ও লাঠিটা পাশের টেবিলে রাখুন। ধন্যবাদ। বসুন। নিজের বন্দুকটা বের
করবেন কী? তা বেশ। ওটা নিয়েই বসুন না হয়। আপনার আসা খুবই সৌভাগ্যের। আসলে
এখনই আমি আপনার সঙ্গে কয়েকমিনিট কথা বলার কথা ভাবছিলাম।
কাউন্ট মুখ গোমড়া করে রইলেন।
"আমারও আপনার সঙ্গে কথা ছিল হোমস। সেজন্যই আমি এসেছি। অস্বীকার করবো না। সত্যিই আমি এইমাত্র আপনাকে খুন করতে চেয়েছিলাম।"
হোমস টেবিলের ধারে পা দোলাতে লাগলেন।
"আমি ভেবেছিলাম আপনার মনে হতে পারে আমার কথা। কিন্তু কথা বলার প্রয়োজন কেন?"
"কারণ আপনি আমায় বিরক্ত করতে করতে ভদ্রতার সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। আপনি আমার পিছনে আপনার লোক লেলিয়ে দিয়েছেন।"
"আমার লোক! আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে আপনার পেছনে লেলিয়ে দেওয়ার মতো লোক আমার নেই।"
"মিথ্যে কথা! আমাকে দুজন লোক অনুসরণ করছিল হোমস!"
"একটা
ছোট্ট কথা কাউন্ট সিল্ভিয়ুস, আমার নাম বলার সময় নামটাকে একটু সম্মান দিলে
ভালো হয়। আপনি নিশ্চয়ই বুঝবেন। আসলে খুব ঘনিষ্ঠ লোক ছাড়া আমি ওভাবে নিজের
নাম শুনতে অভ্যস্ত নই।"
"বেশ। তবে 'মিঃ হোমস'!"
"দুর্দান্ত! কিন্তু আমি বলছি যে আপনি আমার চরদের ব্যাপারে ভুল করছেন।"
কাউন্ট
তার উত্তরে যে হাসিটা হাসলেন, তাতে যথেষ্ট পরিমাণ বিদ্রূপ স্পষ্ট। তিনি
বললেন, "অন্য লোকেরও আপনার মতো পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা থাকে। গতকাল ছিল এক মজুর,
আজ ছিল এক বুড়ি। আমাকে সারাদিন তারা চোখে চোখে রেখেছিল।"
"আসলে,
স্যর, আপনি নিজের অজান্তে আমারই প্রশংসা করলেন। বৃদ্ধ ব্যারন ডসনের
ব্যাপারটায় আমিই তদন্ত করেছিলাম। ফাঁসি যাওয়ার আগের রাতে তিনি বলেছিলেন,
আইন যা পেল, রঙ্গমঞ্চ তা হারালো। আর এখন আপনি নিজেও আমার সামান্য কিছু
ছদ্মবেশকে আপনার প্রশংসায় ধন্য করলেন।
"এটা আপনি --- আপনি নিজে ছিলেন!"
হোমস
কাঁধ ঝাঁকালেন, "আপনি ঐ কোণে ছাতাটা দেখতে পাবেন যেটা আপনি অত্যন্ত
নম্রতার সঙ্গে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন মাইনরিতে। অবশ্যই তা আমায় সন্দেহ
করার আগে।"
"যদি আমি জানতাম যে ওই বুড়ি আপনি, তাহলে আপনি কখনোই আর ---"
"এই
সুন্দর বাড়িটা দেখতে পেতাম না। হ্যাঁ, আমি এটা খুব ভালোভাবে জানতাম। আমরা
সবাই আসলে হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলি। তো ব্যাপারটা যেটা হল, আপনি জানতে
পারলেন না। তাই, এখনও আমি আপনার সামনে বসে আছি।"
কাউন্টের
ভ্রূ আরো কুঞ্চিত হলো, "আপনি যা বললেন, তাতে ব্যাপারটা আরও জটিল হল। আপনার
চরের বদলে আপনি নিজে আমাকে অনুসরণ করেছেন এটা আপনি স্বীকারও করছেন। কিন্তু
কেন?"
"কাউন্ট, আপনি আলজিরিয়াতে সিংহ মারতেন?"
'হ্যাঁ। তো?"
"কেন মারতেন?"
"কেন আবার কী? খেলা --- উত্তেজনা --- বিপদের সঙ্গে পাঞ্জা লড়া!"
"এবং নিঃসন্দেহে দেশটাকে সিংহ নামক পোকার থেকে মুক্ত করার জন্য?"
"ঠিক তাই!"
"আসলে, সংক্ষেপে বললে, আপনাকে অনুসরণ করার পেছনে আমার কারণগুলোও সংক্ষিপ্তভাবে একই।"
কাউন্ট লাফিয়ে উঠলেন। তাঁর বাঁ হাত পেছনের পকেটে চলে গেলো।
"বসে পড়ুন স্যর। বসুন। আর একটা অত্যন্ত জরুরী কারণও ছিল। আমার যে হলদে হীরেটা চাই।"
কাউন্ট সিলভিয়ুস শয়তানী হাসি হেসে চেয়ারে হেলান দিলেন।
"তাই নাকি?", তিনি বললেন।
"আপনি
জানতেন যে আমি ঐ জন্যই আপনার পেছনে লেগেছি। আপনার আজ রাতে এখানে আসার কারণ
হলো আমি এ ব্যাপারে কতটা জানি তা জানা এবং আমাকে সরিয়ে দেওয়াটা জরুরী কি
না সেটা বোঝা। বেশ। আপনার দিকে থেকে যদি আমি বলি, তবে বলবো, হ্যাঁ। খুব
জরুরী আমায় সরিয়ে দেওয়া। কারণ আমি সবই জানি, শুধু একটা জিনিস বাদে। যেটা
আপমি আমাকে এখনই বলে দেবেন।"
"ও! নিশ্চয়ই! শুনি কী জিনিষ?"
"হীরেটা কোথায়?"
কাউন্ট কঠোরভাবে সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন, "ও। এই আপনার জিজ্ঞাস্য। কিন্তু আমি কী করে আপনাকে বলতে পারি যে সেটা কোথায়?
"আপনিই পারেন। আর আপনিই বলবেন।"
"মোটেই না!"
"আপনি
আমাকে ঠকাতে পারবেন না, কাউন্ট সিলভিয়ুস।" হোমসের চোখ তাঁর দিকে তাকিয়ে
থাকতে থাকতে জ্বলজ্বল করে উঠল। "আপনি একটা স্বচ্ছ কাচ। আমি আপনার মনের ভেতর
অবধি দেখতে পাচ্ছি।"
"তবে নিশ্চয়ই আপনি দেখতে পাচ্ছেন হীরেটা কোথায়?"
হোমস হাততালি দিয়ে উঠলেন। তারপর তাঁর দিকে অর্থপূর্ণ আঙুল তুলে বললেন, 'তাহলে আপনি জানেন। এটা আপনি স্বীকার করলেন।"
"আমি কিচ্ছু স্বীকার করিনি।"
"কাউন্ট, আপনি যদি বুঝদার হন, তবে আমরা এবার কাজের কথায় আসি। এত ফালতু কথায় আপনার নিশ্চয়ই সময় ব্যয় হচ্ছে।"
কাউন্ট সিলভিয়ুস ছাতের দিকে তাকিয়ে বললেন, "আর আপনি কিনা ঠকানোর কথা বলেন।"
হোমস
তাঁর দিকে তাকালেন যেভাবে একজন দক্ষ দাবাড়ু রাজাকে কিস্তি দেওয়ার আগে
প্রতিপক্ষের দিকে তাকায়। তারপর টেবিলের ড্রয়ারটা খুলে একটা ছোট নোটবুক বের
করলেন।
'আপনি জানেন এতে কী আছে?"
"না, স্যর!"
"আপনি।"
"আমি?"
"হ্যাঁ, স্যর, আপনি! আপনিই এখানে আছেন --- আপনার নিষ্ঠুর ও ভয়ঙ্কর জীবনের প্রতিটা কীর্তি এতে রয়েছে।"
"হোমস! জ্বলন্ত চোখে কাউন্ট চেঁচিয়ে উঠলেন, "আমার সহ্যের একটা সীমা আছে।"
"এখানে
সবই আছে কাউন্ট। বৃদ্ধা মিসেস হ্যারল্ডের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ, যিনি
আপনাকে ব্লাইমারের সম্পত্তি দিয়ে গেছিলেন। যে সম্পত্তি আপনি জুয়াতে
দু'দিনেই উড়িয়ে দেন।"
"আপনি স্বপ্ন দেখছেন!"
"এবং মিস মিনি ওয়ারেন্ডারের সম্পূর্ণ জীবন বৃত্তান্ত।"
"ধ্যাৎ! ও দিয়ে আপনি কিচ্ছু প্রমাণ করতে পারবেন না।"
"আরও অনেক আছে, কাউন্ট! এই যে, ১৮৯২ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারী রিভিয়েরাগামী ডিলাক্স ট্রেন ডাকাতি, ঐ বছরই সেই চেক জালিয়াতির ব্যাপারটা!"
"না, আপনি ওখানে ভুল করলেন।"
"তার
মানে আমি অন্য সবগুলোই ঠিক বলেছি! কাউন্ট, আপনি খুব ভালো তাস খেলতে পারেন।
যখন তুরুপের তাস সবই অন্যদের হাতে থাকে, তখন হাল ছেড়ে দিলেই সময় বাঁচে।
তাই না কী?"
"কিন্তু এর সঙ্গে আপনি যে হীরের কথা বলছেন, তার কী সম্পর্ক?"
"ধীরে,
কাউন্ট, ধীরে। নিজের মনের আগ্রহকে সংযত করুন! আমাকে আমার মতো করে মূল কথায়
আসতে দিন! আমার কাছে আপনার বিরুদ্ধে এতগুলো অভিযোগ রয়েছে, কিন্তু,
সর্বোপরি আমার হাতে আপনার এবং আপনার ঐ মারকুটে বন্ধু, উভয়ের বিরুদ্ধেই
মুকুটের মণির মামলার অভিযোগ রয়েছে।"
"তাই নাকি?"
"সাক্ষী
হিসেবে আমার হাতে রয়েছে সেই দু'জন ট্যাক্সিচালক, যে আপনাকে হোয়াইটহল অবধি
নিয়ে গেছিল এবং নিয়ে এসেছিল। সাক্ষী হিসেবে আছেন আপনাকে হীরের বাক্সের কাছে
দেখা সেই কমিশনার। আমার হাতে আছে আইকী স্যান্ডার্স, যে আপনাদের কথায়
হীরেটা কাটতে চায় নি। আইকী সব স্বীকার করেছে। খেলা শেষ, কাউন্ট।"
কাউন্টের কপালের শিরাগুলো দপদপ করছিল। তিনি কপালে হাত দিয়ে বসেছিলেন। কিছু একটা বলতে চাইলেন, কিন্তু কথা বেরোলো না।
"এই
হল আমার হাতের তাস।" হোমস বললেন, আমি সবকটাই আপনার সামনে ফেলে দিলাম।
কিন্তু একটা তাস নেই। রুহিতনের বাদশা। হীরেটা কোথায় সেটা আমি জানি না।"
"আপনি কোনোদিনই জানবেন না।"
"ব্যাপারটা
বুঝুন কাউন্ট। পরিস্থিতিটা ভাবুন। কুড়ি বছরের জন্য জেলে যেতে হবে। স্যাম
মার্টনেরও একই হাল হবে। তাহলে হীরেটা থেকে আপনাদের কোনো লাভই হবে না।
কিন্তু, আপনি যদি ওটা ফিরিয়ে দেন --- আমি একটা কাজ করতে পারি। আমরা আপনাকে
বা স্যামকে চাই না। আমাদের দরকার মণিটা। ওটা দিয়ে দিন, আমি কথা দিচ্ছি যে
ভবিষ্যতে আমি আর এই ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাবো না। কিন্তু, ভবিষ্যতে যদি
আপনি আর একটাও ভুল করেন, তাহলে সেটাই হবে আপনার শেষ ভুল। এই মামলায় আমার
উদ্দেশ্য মণিটাকে হস্তগত করা। আপনাকে না।"
"কিন্তু যদি আমি আপনার কথা না শুনি?"
"সেক্ষেত্রে আমার পাতা জালে আপনি এবং মণি, দুটিই পড়বে।"
ইতিমধ্যে হোমসের বাজানো বেলের উত্তরে বিলি এসে দাঁড়ালো।
"আমার
মনে হয় কাউন্ট, আপনার সঙ্গী স্যামকেও এই আলোচনাতে নিয়ে আসা উচিত। তাঁর
মতামতও তো জরুরী! বিলি, আমাদের বাইরের দরজার সামনে দেখবে একজন বিশ্রী দেখতে
রুক্ষমতো লোক দাঁরিয়ে আছেন। তাঁকে ওপরে আসতে বলো।"
"যদি না আসতে চায়, স্যর?"
"কোনো জবরদস্তির প্রয়োজন নেই বিলি। তুমি যদি তাঁকে বলো যে কাউন্ট সিল্ভিয়ুস তাঁকে ডাকছেন, তিনি চলে আসবেন।"
"আপনার মতলবটা কী বলুন তো?" বিলি চলে যেতেই কাউন্ট জিজ্ঞাসা করলেন।
"আমার
বন্ধু ওয়াটসন একটু আগে আমার সঙ্গে ছিল। আমি ওকে বলছিলাম যে আমার জালে একটা
হাঙর আর একটা ভেটকী মাছ ধরা পড়েছে। আর এখন জাল টানার সঙ্গে সঙ্গে ওরাও উঠে
আসছে।"
কাউন্ট চেয়ার ছেড়ে উঠে
দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর হাতটা আবার পেছনে চলে গেছিল। হোমস তাঁর ড্রেসিং গাউনের
পকেট থেকে কিছু একটা অর্ধেক বের করলেন।
"আপনি বিছানায় মরবেন না, হোমস।"
"এটা
আমার অনেকবার মনে হয়েছে। কিন্তু খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সেটা না।
যাকগে, বাদ দিন। আমাদের উচিত বর্তমান সময়টাকে অফুরন্ত আনন্দের সঙ্গে উপভোগ
করা।"
হঠাৎই একটা জান্তব উল্লাস ঐ নিপুণ
অপরাধীর চোখে ফুটে উঠল। যেই তিনি হোমস্কে আঘাত করার জন্য তৈরী হলেন, হোমসও
লম্বা, ঋজু শরীরে খাড়া হয়ে দাঁড়ালেন।
হোমস
শান্তভাবে বললেন, "বন্দুক ব্যবহার করার চেষ্টা করে কোনো লাভ এই বন্ধু।
আপনি জানেন যে আমি আপনাকে যদি বন্দুক বের করার সময়ও দিই, তবু আপনি তা
ব্যবহার করবেন না। বড্ড শব্দ করে এই রিভলবার, কাউন্ট, ওর চেয়ে এয়ারগান
ভালো। আঃ! মনে হচ্ছে আপনার সঙ্গীর পদক্ষেপ আমি শুন্তে পাচ্ছি। শুভ সন্ধ্যা
মিঃ মার্টন! রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে সময় কাটানোর চেয়ে ঘরে বসা ভালো। কী
বলেন?"
পদকপ্রাপ্ত,
ভারী চেহারার একটা লোক একগুঁয়ে বোকার মতো মুখ করে দরজার সামনে অদ্ভূতভাবে
দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে হতভম্বভাবে দেখছিল। হোমসের হাসিখুশি রূপটা তার কাছে এক
নতুন অভিজ্ঞতা। যদিও সে অস্পষ্টভাবে বুঝল যে তিনি শত্রুপক্ষের। কিন্তু তাঁর
কথায় কীভাবে প্রতিক্রিয়া করতে হবে বুঝল না। সে নিজের ধূর্ত সঙ্গীর দিকে
ঘুরলো।
"কী ব্যাপার কাউন্ট? কী চায় এই লোকটা?" সে কর্কশভাবে জিজ্ঞাসা করলো।
উত্তর এল হোমসের কাছ থেকে।
"যদি খুব সংক্ষেপে বলি মিঃ মার্টন, আমি বলবো, খেলা শেষ।"
বক্সারটি তখনও তার পরিচালকের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, "এই লোকটা কী মজা করছে নাকি? আমি কিন্তু এখন ঠিক ফুর্তির মেজাজে নেই।"
"আমার
মনে হয়, না।" হোমস বললেন, "আমার ধারণা আমি আপনাকে কথা দিতে পারি, যত রাত
বাড়বে, আপনার ঠাট্টার ইচ্ছে তত কমতে থাকবে। দেখুন কাউন্ট সিলভিয়ুস, আমি খুব
ব্যস্ত মানুষ। আমার সময়ের দাম অনেক। আমি একটু শোবার ঘরে যাচ্ছি। আমার
অবর্তমানে আপনারা আরাম করে বসে কথা বলুন। আপনি আপনার বন্ধুকে বর্তমান
পরিস্থিতিটা আমার অবর্তমানেই ভালো বোঝাতে পারবেন। আমি ততক্ষণ হফম্যান
বারাকোলের সুরটা আমার বেহালায় তোলার চেষ্টা করি। পাঁচ মিনিট বাদে আমি আমার
উত্তর নিতে আসবো। মনে রাখবেন, আপনার কাছে দুটো উত্তর আছে। আমরা আপনাদের
চাই, নাকি পাথরটা আপনারাই আমাদের দেবেন?"
হোমস
ঘরের কোণ থেকে তাঁর বেহালাটা তুলে নিয়ে পাশের ঘরে চলে গেলেন। কয়েক মুহূর্ত
বাদেই শোবার ঘরের বন্ধ দরজার ওপার থেকে বেহালার সুর ভেসে আসতে লাগল।
"কী ব্যাপার?" সঙ্গীকে নিজের দিকে ঘুরতে দেখে মার্টন আশঙ্কিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, "ও কী পাথরটা সম্পর্কে জানে?"
"আমরা যা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি। আমার তো সন্দেহ যে ও সবকিছুই জানে।"
"হে ভগবান!" বক্সারের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো।
"আইকি স্যান্ডার্স আমাদের ফাঁসিয়েছে।"
"তাই নাকি? দাঁড়ান, ওকে আমি মজা দেখাচ্ছি। একটি ঘুঁষিতে ---"
"তাতে আখেরে কোনো লাভ নেই। আমাদের বুদ্ধি খাটাতে হবে।"
"এক মিনিট", বক্সারটি সন্দেহের চোখে বন্ধ দরজার দিকে দেখল, "লোকটা খুব ধূর্ত। আশা করি ও এই কথাগুলো শুনতে পাচ্ছে না!"
"বেহালার আওয়াজের মধ্যে শুনবে কী করে?"
"ঠিক
ঠিক। কিন্তু পর্দার পেছনে ওর লোক থাকতে পারে। ঘরটায় বড্ড বেশি পর্দা
দেওয়া।" জানলার পর্দাটা সরিয়ে যেই সে নকল হোমসের মূর্তিটা দেখল, অবাক হয়ে
দাঁড়িয়ে আঙুল দিয়ে কাউন্টকে দেখালো।
"ধ্যাৎ! ওটা একটা মূর্তি। নকল হোমস।" কাউন্ট বললেন।
"নকল? তাই নাকি? মাদাম ত্যুসোও মনে হয় এরকম মূর্তি বানাতে পারবেন না। একদ্ম যেন জ্যান্ত। কিন্তু ওই পর্দাগুলো কাউন্ট?"
"পর্দা ছাড়ো! বড্ড বেশি সময় নষ্ট হচ্ছে। হাতে সময় নেই একদম। হোমস ধরে ফেলবে পাথরটা কোথায় রেখেছি।"
"যা শয়তান লোক! খুব জলদিই পারবে।"
"কিন্তু ও আমাদের ছেড়ে দেবে যদি ওকে বলে দিই পাথরটা কোথায় আছে।"
"পাথরটা ছেড়ে দেবো! একলক্ষ পাউন্ড ছেড়ে দেবো?"
"যে কোনো একটা করতেই হবে।"
মার্টন মাথা চুলকোলো।
"কিন্তু ও তো এখানে পুরো একা। ওকে শেষ করে দিই বরং। ও মরে গেলে তো আর ঝামেলা থাকবে না।"
কাউন্ট মাথা নাড়লেন।
"ও
সম্পূর্ণ সশস্ত্র আর তৈরী। ওকে গুলি করে আমরা যদি পালাতেও পারি, আমাদের
ধরে ফেলার মতো প্রমাণ ওর কাছে আছে। যেটা ও মারা গেলে পুলিশ পাবে। তাতে বিপদ
বাড়বে বই কমবে না। আরে! কী হল?"
একটা
অস্পষ্ট ভোঁতা আওয়াজ জানলার দিক থেকে এলো। দুই অপরাধী লাফিয়ে উঠলেও
পরক্ষণেই সব চুপচাপ। আরামকেদারায় বসা মূর্তিটা ছাড়া আর সন্দেহজনক কিছুই ছিল
না ঘরের মধ্যে।
"সম্ভবত রাস্তায় কিছু।"
মার্টন বলল, "দেখুন, আপনার বুদ্ধি আছে। আপনিই রাস্তা বের করুন। মারপিট করে
লাভ না থাকলে আমি নিষ্কর্মা। আপনার বুদ্ধিই ভরসা।"
"আমি
ওর চেয়ে বাঘা বাঘা লোককে বোকা বানিয়েছি।" কাউন্ট উত্তর দিলেন, "পাথরটা
আমার সঙ্গেই রয়েছে। চোরাপকেটে। রেখে আসার ঝুঁকি নিই নি। আর রবিবারের মধ্যে
আমস্টারডামে এটা চারটুকরো হয়ে যাবে। ও ভ্যান সেডারের কোনো খবর জানে না।"
"আমি তো জানতাম ভ্যান সেডার পরের সপ্তাহে যাচ্ছে।"
"যেত। কিন্তু এখন ওকে পরের জাহাজেই যেতে হবে। আমাদের মধ্যে যেকোনো একজনকে পাথরটা নিয়ে লাইম স্ট্রীটে গিয়ে ওকে জানাতে হবে।"
"কিন্তু নকল তলাটা এখনও তৈরী হয়নি।"
"কিছু
করার নেই। এই অবস্থাতেই যেতে হবে। এক মুহূর্তও সময় সময় নষ্ট করা যাবে না।"
কাউন্ট আর একবার সন্দেহের সঙ্গে জানলার দিকে তাকিয়ে নিশ্চিত হলেন ঐ শব্দটা
রাস্তা থেকেই এসেছিল।
"আর হোমস," তিনি
বলতে লাগলেন, "ওকে বোকা বানানোটা সহজ। বোকাটা বলেছে আমাদের গ্রেপ্তার করবে
না ওকে যদি হীরেটা দিয়ে দিই। বেশ। ওকে আমরা সেরকমই বলবো। ভুল দিকে চালনা
করে দেবো ওকে। যতক্ষণে ও বুঝবে যে ও ভুল দিকে এসেছে, ততক্ষণে আমরা দেশের
বাইরে, আর হীরে হল্যান্ডে।"
"বেশ বেশ।"
"তুমি
গিয়ে ভ্যান সেডারকে সব জানাও। এদিকে আমি এই বোকাটাকে সামলাচ্ছি। ওঃ! কী
প্যানপ্যানে বাজনা রে বাবা! মাথা ধরিয়ে দিল। যতক্ষণে ও বুঝবে হীরেটা
লিভারপুলে নেই, ততক্ষণে আমরা নীল সমুদ্রের বুকে। ওর ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই
দেখো পাথরটা।"
"আপনি সত্যিই ওটাকে সঙ্গে করে নিয়ে ঘুরছেন!"
"এর চেয়ে সুরক্ষিত জায়গা আর নেই।"
"দিন তো দেখি পাথরটা, একটু ভালো করে দেখি।"
কাউন্ট
সিলভিয়ুস মার্টনের বাড়িয়ে দেওয়া অপরিষ্কার হাতে হীরেটা তুলে দিতে ইতস্তত
করতে মার্টন বলল, "আপনার কী মনে হয়, হীরেটা আমি আপনার থেকে কেড়ে নেবো?
দেখুন মশাই, আপনার হাবভাব আমার সুবিধের ঠেকছে না।"
"না না, স্যাম। এখন গৃহযুদ্ধের সময় না। যদি এর প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে চাও তাহলে জানলার ধারে এসো।"
"ধন্যবাদ!"
একলাফে
হোমস মূর্তির চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে হীরেটা ছিনিয়ে নিলেন। এখন তাঁর এক
হাতে হীরে ও অন্য হাতে কাউন্টের মাথা তাক করে রাখা বন্দুক। দুই অপরাধী অবাক
বিস্ময়ে থতমত খেয়ে গেলেন। তাঁদের ধাতস্থ হওয়ার আগেই হোমস ঘন্টা বাজালেন।
"কোনো
আক্রমণ নয় --- ভদ্রমহোদয়গণ --- অনুরোধ করছি! আসবাবপত্রগুলোর কথা মাথায়
রাখবেন। আর পালানোর চেষ্টাও করবেন না। নীচে পুলিশ রয়েছে।"
কাউন্টের মুখ রাগে এবং ভয়ে লাল হয়ে গেলো।
"কিন্তু, কীভাবে ---?" কাউন্ট বিস্ময়ে বলে উঠলেন।
"আপনার
অবাক হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আপনি তো আর আমার শবার ঘরের দ্বিতীয় দরজার কথা
জানেন না, যেটা পর্দার পেছনে আছে। আপনারা মনে হয় মূর্তিটা সরানোর শব্দ
পেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় ছিল। এর জন্য আমি সুযোগ পেয়ে গেলাম
আপনাদের প্রাণখোলা কথাবার্তা শোনার। আপনারা যদি আমার উপস্থিতি বুঝতে
পারতেন, তাহলে আপনাদের কথাবার্তা বিচ্ছিরিভাবে সংযত হয়ে যেতো।"
কাউন্ট দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। "না হোমস, মানছি, আপনিই সেরা। আমার বিশ্বাস আপনিই মূর্তিমান শয়তান।"
"শয়তান না হতে পারলেও, আমার আসন তাঁর ঠিক পরেই।" হোমস নম্রভাবে হেসে উত্তর দিলেন।
স্যাম
মার্টনের ধীর বুদ্ধি এতক্ষণে পরিস্থিতিটা অনুধাবন করতে পারছিলো। সিঁড়িতে
যখন ভারী বুটের শব্দ শোনা যেতে লাগলো, তখন সে নীরবতা ভাঙল।
"দুর্ধর্ষ! কিন্তু ঐ বাজনাটা! ওটা তো এখনও শুনতে পাচ্ছি!"
"ওটা বাজতে দিন মিঃ মার্টন। এই গ্রামোফোন বিজ্ঞানের একটা দুর্দান্ত আবিষ্কার।"
এমন
সময় ঘরে পুলিশ ঢুকে এলো। হাতকড়া পরিয়ে অপরাধীদের নিয়ে যাওয়া হল। ওয়াটসন
হোমসের সাফল্যের মুকুটে আর একটি পাতা যোগ হওয়ায় তাকে অভিনন্দিত করলেন।
তাঁদের কথাবার্তায় বাধা পড়ল আর একবার বিলি কার্ড-ট্রে নিয়ে ঘরে ঢোকায়।
"লর্ড ক্যান্টলমেয়ার, স্যর।"
"ওঁকে
ওপরে পাঠিয়ে দাও বিলি। রাজকীয় ধাঁচে চলা এই ভদ্রলোক একটু সাবেকী ধাঁচের।
ওঁর সঙ্গে একটু মজা করা যাক। কী বলো, ওয়াটসন? অবশ্যই তিনি একটু আগে ঘটে
যাওয়া ব্যাপার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন।"
দরজা
খুলে ধীর পদক্ষেপে রোগা, কঠোর গড়নের এক ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন। মধ্যযুগীয়
ঝোলা গোঁফের তলায় এক বিদ্রূপপূর্ণ হাসির সঙ্গে সঙ্গে বয়সোচিত বেঁকে যাওয়া
কাঁধ তাঁকে আরও সেকেলে করে তুলেছিল।
হোমস
তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে বললেন, "কেমন আছেন লর্ড
ক্যান্টলমেয়ার? বাইরে আজ একটু ঠান্ডাটা বেশি বটে, তবে আমাদের ঘরটা যথেষ্ট
গরম। আপনার ওভারকোটটা খুলতে আপনাকে সাহয্য করি?"
"না, ধন্যবাদ। আমি এটা খুলতে চাই না।"
হোমস তবু তাঁর হাতটা কোটের হাতার ওপর রাখলেন।
"দয়া
করে খুলে ফেলুন। আমার বন্ধু ওয়াটসন পেশায় একজন ডাক্তার। ও আপনাকে নিশ্চিত
হতে সাহায্য করবে যে এই উষ্ণতার পরিবর্তন স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকারক।"
লর্ড কিছুটা অধৈর্য্যের সঙ্গেই হোমসের হাত থেকে নিজেকে ঝাঁকুনি দিয়ে মুক্ত করলেন।
'আমি
যথেষ্ট আরামে আছি, স্যর। আর আমি এখানে বেশিক্ষণ থাকতে আসিনি। আমি শুধু
দেখতে এসেছিলাম যে আপনার যেচে নেওয়া কাজটা কতদূর এগিয়েছে।"
"কাজটা খুবই কঠিন।"
"যাক, আপনি এটা বুঝেছেন।"
বৃদ্ধের
কথার মধ্যে ব্যঙ্গ প্রকাশ পেলো, "সবার দক্ষতারই একটা নিজস্ব সীমা থাকে মিঃ
হোমস। সেটাই আমাদের আত্মবিশ্বাসের দম্ভ ভাঙতে সাহায্য করে।"
"হ্যাঁ স্যর। আমি খুবই অবাক হয়েছি।"
"নিঃসন্দেহে।"
"বিশেষতঃ একটি বিষয়ে। সম্ভবত আপনি আমায় সে ব্যাপারে সাহয্য করতে পারেন।"
"সেই
চাইলেন, কিন্তু বড্ড দেরী করে চাইলেন। আমি ভেবেছিলাম আপনার নিজস্ব
পদ্ধতিতেই কার্যোদ্ধার হয়ে যাবে। তা বেশ। আপনাকে সাহায্য করতে আমি
প্রস্তুত।"
"লর্ড ক্যান্টলমেয়ার, আমার একটা প্রশ্ন ছিল। আমরা কী প্রকৃত চোরদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি?"
"নিশ্চয়ই! ওদের ধরতে পারলে নিশ্চয়ই পারেন।"
"কিন্তু, ব্যাপারটা হলো --- চোরকে ধরবো কীভাবে?"
"খুব বোকা বোকা প্রশ্ন হল না কী?"
"না। এটা জানলে আমি আমার পরবর্তী পরিকল্পনা ঠিক করতে পারবো। অপরাধীদের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত প্রমাণ আপনার মতে কী হতে পারে?"
"তার বা তাদের কাছে পাথরটা থাকলেই হলো!"
"আপনি তার ওপরে ভিত্তি করে অপরাধীকে গ্রেপ্তার করবেন?"
"নিঃসন্দেহে।"
হোমস তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে খুব কম হাসতেন। ওয়াটসন মনে করার চেষ্টা করলেন, এই দিনের আগে তিনি শেষ কবে তাঁর বন্ধুকে হাসতে দেখেছেন।
"তাহলে স্যর, আমি আপনাকেই গ্রেপ্তার করবো।"
লর্ড বেজায় চটে গেলেন। বৃদ্ধের মুখ রাগে লাল হয়ে উঠল।
"আপনি
এবার বাড়াবাড়ি করে ফেলছেন মিঃ হোমস। আমার পঞ্চাশ বছরের চাকরিজীবনে এমন
কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি বিভিন্ন জরুরী কাজে ব্যস্ত থাকি স্যর, এই বোকা বোকা
ইয়ার্কির জন্য আমার সময়ও নেই আর আমার এসব ভালোও লাগেনা। সত্যি বলতে কী,
আপনার দক্ষতার ওপর আমার বিন্দুমাত্র ভরসা নেই। আর এই ব্যাপারটা পুলিশের
হাতে ছেড়ে দিলেই ভালো হত। শুভ রাত্রি।"
হোমস
চট করে এগিয়ে গিয়ে তাঁর পথ আটকালেন। "এক মিনিট স্যর," তিনি বললেন,
"ম্যাজারিন মণিটা নিজের সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়াটা সাংঘাতিক অপরাধ হবে।"
"উফফ! আপনার রসিকতা অসহ্য!। আমায় যেতে দিন।"
"আপনার হাতটা আপনার ওভারকোটের ডান পকেটে ঢোকান।"
"আপনি কী বলতে চাইছেন?"
"অনুগ্রহ করে যেটা করতে বললাম, তা করুন।"
পকেটে হাত ঢোকানোর পরের মুহূর্তে বৃধ তাঁর হাতে হলদে মণিটি নিয়ে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।
"কিন্তু, কীভাবে, মিঃ হোমস?"
"লর্ড
ক্যান্টলমেয়ার, স্যর, আমার বন্ধু আপনাকে আমার এরকম বদরসিকতার বদভ্যাসের
ব্যাপারে সন্দেহমুক্ত করবে। তাছাড়া নাটকীয় মুহূর্ত তৈরী করাও আমার একটা
বদভ্যাস। আমি স্বীকার করছি --- কথাবার্তা শুরু করার আগেই আমি আপনার কোটের
পকেটে হীরেটা ভরে দিয়েছিলাম।"
"আমি
অভিভূত, কিন্তু --- হ্যাঁ --- এটাই সেই ম্যাজারিন মণি। আমরা সত্যিই আপনার
কাছে ঋনী। আপনার রসবোধও সত্যিই অসাধারণ। আপনার ক্ষমতা সম্পর্কে আমি যে
ধারণা পোষন করতাম, তা আজ বদল হলো। কিন্তু, কীভাবে ---"
"মামলাটা
অর্ধেক শেষ হয়েছে লর্ড ক্যান্টলমেয়ার। পরে সবই জানতে পারবেন। বিলি, তুমি
লর্ডকে এগিয়ে দাও, আর শোনো, মিসেস হাডসনকে বলো যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের
দু'জনের জন্য রাতের খাবার পাঠাতে।"
© দীপ্তজিৎ মিশ্র
Comments
Post a Comment