আমি
একটা কলম। বেশ কুলীন বংশের সন্তান। সেলো আমার বংশের নাম। এখন অবশ্য আমাদের বংশের সঙ্গে আরো অনেক বংশ যোগ হয়েছে – লিংক, রেনল্ডস, ফ্লেয়ার, ইত্যাদি। তবে পার্কার আর পিয়ের কার্ডিন
ছাড়া আমরা কাউকে বিশেষ পাত্তা দিই না। আমরা কলমের বংশে বেশ পুরোনো। তবে এখন আমাদের মানুষ বেশি কেনে না উপহার দেওয়ার
মামলা ছাড়া। মানুষ আজকাল ঐ অগ্নি-মার্কা
সস্তার ছোটলোকগুলোকে দিয়েই কাজ চালিয়ে নেয়। তবে অগ্নিমার্কা কলমরা কলম সমাজে কোনো মর্যাদা পায় না। ওদের পাড়াটাকে আমরা মানুষের সমাজের ‘গণিকাপাড়া’র সঙ্গে তুলনা
করি। মিলও আছে অবশ্য ওদের সঙ্গে। ইউস অ্যান্ড থ্রো! সেখানে আমাদের কালি ফুরিয়ে গেলেও আমরা থ্রোন থেকে থ্রোন আউট হই না, উলটে
নতুন কালি ভরা হয়। এই দশ বছরের
জীবনে কম কালি দেখলাম?
কতরকমের রঙ – হালকা, ডীপ, কতরকম কালি – ঘন, পাতলা!
তবে
আমার যিনি মালিক, তিনি আমায় খুব যত্ন করেন। অন্যান্য কুলীন কলমদের মতো বারবার হাতফেরতা হইনি। জন্ম থেকেই একটাই মালিক আমার। ইদানিং মালিক ঐ ছোটোলোকদের ব্যবহার
করছেন বটে, কিন্তু আমায় তিনি ফেলে দেননি। আমায় একটা বিশেষ কাজে লাগান তিনি। মালিকের একটা ডায়রি আছে। সেটার নাম দিয়েছেন – ‘মনের কথা’। প্রায়ই সেখানে
নানা রকমের লেখা মালিক আমায় দিয়ে লেখান। খুব যত্নে রাখেন আমায়। কারুর হাতে পর্যন্ত দেন না ব্যবহার করতে।
বলেন, আমি নাকি ওঁর ‘প্রাইভেট’ সম্পত্তি।
যে
যাই বলুক না কেন, আমার
মালিকের লেখার হাতটি কিন্তু বেশ। যদিও নিজের কথা লেখার সময় তিনি বারবার বিস্ময় প্রকাশ করেন যে সবাই তাঁর
লেখার কেন ভক্ত, সেটা তিনি বুঝে উঠতে পারেন না। কিন্তু আমি জানি, ক’টা লোকে
পারবে মশাই আমার মালিকের মতো বাংলা আর ইংরিজিতে সমান
দক্ষতায় লিখতে? এনে দেখান তো কেউ! নিজের
ঢাকনার ক্লিপটা ভেঙে ফেলব – এই অ্যাত্ত বড়
কথা বলে দিলুম হুঁ।
তবে
মালিকের জন্যে বড় কষ্ট হয়।
তাঁর লেখাতে বারবার একজনেরই কথা – মৌ। অথচ সেই মেয়েটির সঙ্গে নাকি মালিকের এখন কোনো যোগাযোগও নেই। কিন্তু তবু মালিক সব সময়ে তার
বিষয়ে চিন্তিত। কী জানি কী
ব্যাপার! ভালোবাসাবাসি ছিল হয়তো, বা খুব ভালো
বন্ধু। তবে কষ্ট হয়। লেখার সময় মালিকের হাতের চাপ, লেখার ভাষা, সেগুলো দিয়ে বুঝি যে মালিক কতটা
কষ্ট পান মেয়েটি না থাকায়। নতুন
কিছু সিখলেই, সেই অভিজ্ঞতাটা শুরু করেন ‘জানিস তো মৌ’ দিয়ে।
হয়ত আশা রাখেন যে এক না
একদিন মেয়েটি এই ডায়রিটা পড়বে।
আরো জেনেছি। ‘মৌ’টা নাকি
মালিকের আদর করে দেওয়া নাম। আসল নাম একটা আছে। কিন্তু সেটা তো মশাই পাবলিকলি
বলতে পারব না। ইচ্ছে করে মালিকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একটু সান্ত্বনা দিই। কিন্তু নিরুপায় যে আমি! তবু
মাঝে মধ্যে লিখতে গিয়ে কেঁদে ফেলি। মালিক ভাবেন নিব দিয়ে বুঝি বেশি কালি বেরিয়ে গেল। যদি আস্বাদ নিতেন, দেখতেন কালির স্বাদটা নোনতা।
তবে
যার জন্যে মালিক এত পাগল, তার
মালিক সম্পর্কে ধারণা জানার জন্যে উৎসুক ছিলাম। এই ডায়রিভাই বলল
একদিন যে আমাদের কলমদের
নাকি একটা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট আছে – বকলমে ডট কম। সেখানে
গিয়ে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে জানতে পারলাম, মৌ নামক মেয়েটি
নাকি আবার ঐ অগ্নিমার্কা পেন
ব্যবহার করে। ঠিক আছে! মালিকের জন্যে কবার নিজের সম্মান বিসর্জন দিয়ে কথা বলে ঘটনা জানতে না পারলে আমি
আর মালিকের প্রিয় কলম হলাম কী করতে? সেই
ছোটলোক অগ্নিমার্কাটার সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারলাম, মেয়েটা নাকি আমার মালিকের ওপর থেকে ইন্টারেশট হারিয়ে ফেলে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। এককালে ঐ অগ্নিমার্কার ভাই-বোনরা আমার মালিককে নিয়ে নাকি অনেক কথা লিখেছিল খাতার পাতায় ঐ মেয়েটার জন্যে।
এখন নাকি মেয়েটা আর ভুল করেও
আমার মালিকের কথা লেখায় না। হায়রে আমার মালিক! সেটা জেনেও আপনি এত কষ্ট পান?
এত ভালোবাসেন এই পচা মেয়েটাকে?
যাই
হোক, তবে মালিক যে এত কষ্ট,
এত আঘাত পাওয়ার পরেও মেয়েটাকে এতটা ভালোবাসেন, সেটা যদি মেয়েটাকে জানানো যেত ভালো হত। অগত্যা, আবার ডায়রিভাইয়ের শরণাপন্ন হওয়া। ও-ই বলল
যে আমাদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের সঙ্গে নাকি মানুষদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুকের যোগাযোগ আছে। এক বিলিতি লোক
– কী জোকারবার্গার না কী যেন
নাম, সে নাকি আমাদের
ভাষাকে মানুষের পড়তে পারার ভাষায় অনুবাদ করে ওদের সাইটের দেওয়ালে পোস্ট করানোর ব্যবস্থা করতে পারে। সেই জন্যেই লেখাটা লিখলুম। যদি মানুষরা পড়ে পচা মেয়েটার কাছে বার্তা পৌঁছতে পারেন। শেষ করার আগে ক’টা কথা
আমার মানুষ জগতের পাঠকদের উদ্দেশ্যে – আপনারা সবাই আমার আম্লিকের সমগোত্রীয়। এই মেয়েটির আসল
নাম আপনারা দেওয়ালের অধিকারীর কাছে পেয়ে যাবেন। পারলে মেয়েটাকে জানাবেন যে সে কত
বড়ো অপরাধ করে চলেছে দিনের পর দিন ধরে।
তাহলে আজ আসি? আচ্ছা
নমস্কার।
© দীপ্তজিৎ
মিশ্র
Khub moja pelam lekhata pore
ReplyDeleteBah.. unique..
ReplyDelete