Skip to main content

আবার চেনা মুখ.... .... কতদিন দেখা হয় নি

বহু বছর আগের কথা।  তখন হয়তো ক্লাস সেভেন কি এইট-এ পড়ি।  হটাৎ করে একদিন দেখি মনুদের বাড়িতে এক বৃদ্ধ কাজের লোক ও তার ছেলে এসেছে।  ওহ, আগে বলে রাখা দরকার মনু হলো আমার খুব ছোটবেলার বন্ধু যার বাড়ি আমার বাড়ির ঠিক সামনে।   
আমি হটাৎ করে জিজ্ঞাসা করে উঠলাম মনু কে " ওই, কে এসেছে রে তোদের বাড়ীতে ?" .... ও বলল "আজ থেকে এরা  কাজ করবে আমাদের বাড়িতে "  কিছুদিন যেতে না যেতেই লক্ষ্য করলাম বাচ্চা ছেলেটা আমাদের দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে যেন কিছু বলতে চায়।  বিশেষ করে , যখনই আমি আর মনু খেলতাম।  কিছু দিন এই ভাবে চলার পর আমি ওকে বললাম "ওই শোন , তোর নাম কি রে ? " ..... ও বলে উঠলো অনি। তখনও  ওর চোখে মুখে সেকি না বলা কথার ঝলক।  বুঝতেই পারছিলাম কিছু যেন একটা বলতে চায়। কিছুক্ষন পর খুব আমতা আমতা  করে বলে উঠলো " আমি কি খেলতে পারি তোমাদের সঙ্গে ?" ........
                   ---------------------------------------------------------------------------
  মনু প্রথমে খুব একটা রাজি ছিল না।  তারপর আমি জোরাজোরি করার পর সে রাজি হয়ে গেলো।  আমরা খুব সহজেই ওর সঙ্গে মিশে গেলাম। 
 কিছু সময় চলে যাবার পর আমরা জানতে পারলাম ও স্কুল-এ যায় না।  জিজ্ঞাসা করতে জানতে পারলাম স্কুলের ফিজ ওর বাবা দিতে পারে নি বলে ওকে স্কুলে আর রাখে নি। অনির বুদ্ধি যথেষ্ট ছিল।  খুব ভালো হাতের কাজ জানতো সেই  ছোটবেলা থেকে।  
হঠাৎ একদিন অনির বাবার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়।  তখন ওর বয়স ১৬ বা ১৭।  খুব ভেঙে পড়েছিল। কিছুদিন পর ওদের-ই গ্রামের কিছু আত্মীয় এসে ওকে নিয়ে যায় মনুদের বাড়ি থেকে।  প্রথমে খুব দুঃখ পেলাম।  এতো ছোটবেলার বন্ধু হঠ করে চলে যাবে! আমাদের সাথে আর থাকবে না !! খেলবে না !!! কিন্তু সময় সময়ের সাথে বয়ে যায় ,আস্তে আস্তে সব কথা ভুলতে শুরু করলাম।  জীবনে নতুন বন্ধুরা এলো।  জীবন এগিয়ে গেলো জীবনের মতো।  
                       ---------------------------------------------------------------------------
অনেক বছর পর একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে পার্ক স্ট্রীট মোড়ে  দাঁড়িয়ে আছি বাস ধরবার জন্য।  হঠাৎ করে একজন ছিপছিপে দেখতে মানুষ আমার সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলো "চিনতে পারছো" আমি খুব চেনার চেষ্টা করার পরও ঠিক চিনতে পারলাম না বলে  উঠলাম " কই  না তো " ..... ?
  অল্প হেসে আমাকে বলে উঠলো "আমি অনি "   নামটা শোনা মাত্রই যেন ছোটবেলার সমস্ত স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো।  আমি বলে উঠলাম "তুই চিলিস কোথায় রে এতো গুলো বছর ? আর তোর এই কি অবস্থা হয়েছে ? এত রোগা  হয়ে গেছিস  কি করে ? " ওর কোনো কথা শোনার আগেই আমি ওকে একটা  রেস্টুরেন্ট-এ নিয়ে গেলাম।  
      তার পর জানতে পারলাম ছোট বেলায় ওর মাসি ওকে তাদের গ্রামে নিয়ে যায়।  তখন ওদের সব জমি বিক্রি হয়ে গেছে, ও দিনের পর দিন খেতে পেতো  না শেষ পর্যন্ত গ্রামে মাটির খুলি তৈরী করার কাজ শেখে।  গ্রাম থেকে সেই খুলি (মাটির ভাঁড় ) নিয়ে এসে শহরে বিক্রি করে।  হটাৎ করে সে বলে উঠলো "আজ  আসি রে।  অনেক রাত  হলো।  হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে অনেক দূর যেতে হবে। ভালো থাকিস। " বলে সে চলে গেলো।  
 রেস্টুরেন্ট-এ একা  বসে বসে  আমার  মনে পরে যাচ্ছিল আমাদের ছোটবেলার সেই দিন গুলোর কথা।  সেই খেলা সেই মারপিট কত আনন্দ করেছি আমরা ।  আজ যদি সত্যি ও কিছু লেখাপড়া জানতো তা হলে হয়তো ওকে এতো কষ্ট করতে হতো না।  এই ভাবে কত ছেলে মেয়ে শিক্ষিত, অর্ধ - শিক্ষিত , অশিক্ষিত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।  আজ হয়ত সব থেকে বেশি দরকার সু-শিক্ষার আলোকে দিকে দিকে ছড়িয়ে দেওয়া..........
                                                            শ্রয়ন দে 

Comments

  1. আহা, হৃদয়বিদারক লেখা

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

আমার বাবা - আমার ছেলেবেলা

                                            দেখতে দেখতে তেইশটা বছর পেরিয়ে গেল – বাবাকে দেখিনি, গল্প করিনি, বাবার আদরের ছোঁয়া পাইনি…… বাবার কথা বলতে গিয়েই প্রথমে মনে পড়ে তাঁর মিষ্টি হাসিটা। আমার বাবা ছিলেন একেবারে মাটির মানুষ। আমার কখনো মনে পড়েনা যে বাবা আমাকে জোর গলায় কিছু বলেছেন বা বকেছেন। ছোটবেলায় আমি আর আমার বোন সঞ্চারী বাবার কাজ থেকে ফেরার অপেক্ষায় বসে থাকতাম – কেন না বাবা ফিরে এসে একটু বিশ্রাম নিয়ে আমাদের ভূতের গল্প শোনাবেন সেই আশায়! কী যে মজার দিন ছিল সেই সব... ছোটবেলায় আমার শখ ছিল পুতুল নিয়ে খেলার, খুব ভালবাসতাম। মনে পড়ে একবার বাবা আর মা বিদেশ থেকে ফেরার  সময় একটা Walkie Talkie Doll (পুতুল) নিয়ে এসেছিলেন। আমি  সেই পুতুলটিকে নিয়ে সারাদিন খেলতাম। একদিন একটি ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে এসেছিল আমাদের বাড়িতে তার বাবামায়ের সাথে আর ওর –ও ঐ পুতুলটিকে খুব ভালো লেগে গেল। আমার নরম মনের বাবা আমাকে বললেন ‘মানা তুমি ওই বাচ্চাটিকে তোমার এই পুতুলটি দিয়ে দাও, আমি তোমাকে আবার...

আমরা তো হেমন্তই হতে চাইতাম

আজও বিকেলে মাঝে মাঝে খুব হেমন্ত শুনতে ইচ্ছে হয়..... "কোনোদিন বলাকারা এতো দূরে যেত কি "...... কিংবা "ওলির কথা শুনে বকুল হাসে ".......আজও মনে পরে "বিষ্ণুপ্রিয়া গো আমি চলে যাই ".......বা "সারাটি দিন ধরে / চেয়ে আছিস ওরে /তোর মনে কথা তবুও কেউ জানলো  না"......আকাশে মেঘ করলেই মনে পরে "মেঘের স্বপন দেখি "......শুধু একজনের জন্য।...... হেমন্ত মুখোপাধ্যায় । কখনো আবার বেশি রাতে আজও  শুনি বিবিধ ভারতীতে.... "তেরি দুনিয়া মে জিনিসে /তো বেহতর হ্যায় / কে মর যায়ে ".....আর সাথে যদি হয় 'ছুঁপালো যুঁ দিল মে প্যার মেরা " ...তাহলে তো কথাই নেই।   বাবাদের ছেলেবেলায় খুব প্রিয় ছিল " শূর্পনখার নাক কাটা যায় / উই কাটে বই চমত্কার / খদ্দের কে জ্যান্ত ধরে / গলা কাটে দোকানদার "........ মা এখনও  শুনতে চায় "ঘুম যায় ওই চাঁদ মেঘ পরীদের সাথে "......জ্যাঠার ঘরে বসে কত দুপুর কেটেছে শুধু "বসে আছি পথ চেয়ে"........ সেই কোন ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি "যদি জানতে চাও তুমি / এব্যাথা আমার কত টুকু / তবে বন্দি করা কোনো পাখির কাছে জেনে ...

একই সুরে কত গান

বিষয়টা খুব একটা নতুন নয়।  যদিও বেশ আকর্ষণীয়।  গান আমরা প্রায় সকলেই শুনি।  এবং এও জানি যে এমন গান আছে যা শুনলে হঠাৎ করে মনে হয় "আরে   এই গানটার  একটা হিন্দি আছে না?" বা " এই গানটার বাংলা টা  যেন কি?"  এবং এই গানগুলির বিষয়ে মানুষের এক-ধরণের স্বভাবজাত আকর্ষণ ও আছে।  তাই ভাবলাম দেখি কিছু লেখা যায় কিনা।  মজার ব্যাপার সব গান নিয়ে লেখা খুব একটা সহজ নয়।  তবুও চেষ্টা করে দেখতে গেলে ক্ষতি কি।     প্রথমেই আসা যাক সলিল চৌধুরীর গান -এ।  তিনিই এই কাজ প্রথম শুরু করেন বলেই মনে হয়।  না ভুল হলো তার আগে শচীন কর্তাও আছেন।  তবে আগে সলিল চৌধুরীকে  নিয়েই হোক।  লতাজিকে দিয়ে তিনি ৩৫টি বাংলা  আধুনিক  গান গাইয়ে  ছিলেন।  যার ২৯ খানারই অন্য ভার্সন আছে।  ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত "যারে যারে উড়ে যারে পাখি " গানটির  হিন্দি  ছিল ১৯৬১ সালে প্রকাশিত "মায়া" হিন্দি ছবির " যারে যারে উড় যারে পঞ্চী " . "যারে যারে উড়ে যারে পাখি " এর উল্টো দিকে ছিল " না যেও না" যার হিন্দি ছিল ১৯৬০ সালে...