বহু প্রচেষ্টার পরে লাহিড়ী বাড়িতে জন্ম হলো দুই মেয়ের। একজনের নাম পারমিতা ,আর একজনের নাম মধুমিতা। সবাই বেজায় খুশি। বাড়িতে মা লক্ষ্মী এসেছে ,সবাই আনন্দে ভরপুর। ঠাকুমা নাতনিদের মুখ দেখে বলে উঠলো " আরে, একজন লক্ষ্মী আর এক জন কালী হলো কি করে? " আসলে পারমিতার গায়ের রং খুব চাপা ছিল। আর মধুমিতা ছিল পরীর মতো ফুটফুটে। কালক্রমে কারোর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে ঠাকুমা কোন নাতনি কে বেশি ভালোবাসতেন।
বাবা-মায়ের আদর ও ভালোবাসা পেয়ে দুই মেয়ে বেড়ে উঠতে শুরু করলো। ভালো স্কুলে ভর্তিও হলো, কিন্তু স্কুলেও শিক্ষিকারা যেন পারমিতাকে খুব একটা পছন্দ করতো না , লেখাপড়ার জন্যও না , তার রূপের জন্যও না। এই দিকে মধুমিতা পড়াশুনা ভালো না করলেও শিক্ষিকারা তাকে কিছু বলতো না।
এই ভাবে দুই জন ভালোই বেড়ে উঠছিলো। দুই বোনের মধ্যে ভালোবাসা খুব ছিল। কিন্তু কালক্রমে পারমিতা এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছিলো যে কোথাও যেন তাকে একটু আলাদা করে দেখা হচ্ছে....
কলেজে ওঠার পর দুই বোন একই কলেজে ভর্তি হলো। বন্ধু বান্ধব সব প্রায় এক। কিন্তু সেই কালক্রমে বুঝতে পারলো যে রং কালো হওয়ার জন্য অনেক বন্ধু পারমিতার কাছে আসছে না। মনে মনে এক অবসাদ তাকে দিনের পর দিন গ্রাস করলো। সে বিশ্বাস করতে শুরু করলো যে সত্যি হয়তো পৃথিবীর মানুষ তার কাছে থেকে দূরে সরে যাচ্ছে দিনের পর দিন। মা বাবার দুই জনের অকাল মৃত্যু হওয়ার জন্য ঠাকুমার কাছে মানুষ হচ্ছিল তারা ।
এই ভাবে চলতে চলতে গ্রাজুয়েশনের পরীক্ষা চলে এলো। পারমিতা খুব ভালো পড়াশোনা করতো বলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অর্জন করলো। কলেজে সারা ফেলে দিলো পারমিতা। তার আগে ওই কলেজ কেউ এতো ভালো রেজাল্ট করেনি। প্রথমবার কলেজের শিক্ষক আর শিক্ষিকারা বাহবা দিতে শুরু করলো, সে যেন তার মনের পুরো বিশ্বাস ফেরত পেতে শুরু করেছিল।
মধুমিতা ভালো রেজাল্ট করলো , কিন্তু পারমিতার মতো না। কিন্তু বাড়িতে সেই মধুমিতা কে সমস্ত আত্মীয় স্বজন রা বাহবা দিতে লাগলো। কেউ একবারও পারমিতাকে একটা বাহবা দিলো না। খুব দুঃখে পারমিতা কান্নায় ভেঙে পড়লো। সে খুব সহজে বুঝতে পারলো যে এই সমাজ বা তার ভালোবাসার লোকেরা কিছুতেই তাকে মেনে নেবে না সেই যতই ভালো করুক।
বাবা-মায়ের আদর ও ভালোবাসা পেয়ে দুই মেয়ে বেড়ে উঠতে শুরু করলো। ভালো স্কুলে ভর্তিও হলো, কিন্তু স্কুলেও শিক্ষিকারা যেন পারমিতাকে খুব একটা পছন্দ করতো না , লেখাপড়ার জন্যও না , তার রূপের জন্যও না। এই দিকে মধুমিতা পড়াশুনা ভালো না করলেও শিক্ষিকারা তাকে কিছু বলতো না।
এই ভাবে দুই জন ভালোই বেড়ে উঠছিলো। দুই বোনের মধ্যে ভালোবাসা খুব ছিল। কিন্তু কালক্রমে পারমিতা এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছিলো যে কোথাও যেন তাকে একটু আলাদা করে দেখা হচ্ছে....
কলেজে ওঠার পর দুই বোন একই কলেজে ভর্তি হলো। বন্ধু বান্ধব সব প্রায় এক। কিন্তু সেই কালক্রমে বুঝতে পারলো যে রং কালো হওয়ার জন্য অনেক বন্ধু পারমিতার কাছে আসছে না। মনে মনে এক অবসাদ তাকে দিনের পর দিন গ্রাস করলো। সে বিশ্বাস করতে শুরু করলো যে সত্যি হয়তো পৃথিবীর মানুষ তার কাছে থেকে দূরে সরে যাচ্ছে দিনের পর দিন। মা বাবার দুই জনের অকাল মৃত্যু হওয়ার জন্য ঠাকুমার কাছে মানুষ হচ্ছিল তারা ।
এই ভাবে চলতে চলতে গ্রাজুয়েশনের পরীক্ষা চলে এলো। পারমিতা খুব ভালো পড়াশোনা করতো বলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অর্জন করলো। কলেজে সারা ফেলে দিলো পারমিতা। তার আগে ওই কলেজ কেউ এতো ভালো রেজাল্ট করেনি। প্রথমবার কলেজের শিক্ষক আর শিক্ষিকারা বাহবা দিতে শুরু করলো, সে যেন তার মনের পুরো বিশ্বাস ফেরত পেতে শুরু করেছিল।
মধুমিতা ভালো রেজাল্ট করলো , কিন্তু পারমিতার মতো না। কিন্তু বাড়িতে সেই মধুমিতা কে সমস্ত আত্মীয় স্বজন রা বাহবা দিতে লাগলো। কেউ একবারও পারমিতাকে একটা বাহবা দিলো না। খুব দুঃখে পারমিতা কান্নায় ভেঙে পড়লো। সে খুব সহজে বুঝতে পারলো যে এই সমাজ বা তার ভালোবাসার লোকেরা কিছুতেই তাকে মেনে নেবে না সেই যতই ভালো করুক।
তার আত্মবিশ্বাস দিন দিন তলানিতে চলে যাচ্ছিলো , পড়াশুনা না করে সে বাড়িতেই থাকতো , কারোর সঙ্গে কথা বলতো না। বাড়ির লোকের অপমান দিনের পর দিন সহ্য করলো। ঠিক এই সময় তার এক পুরোনো মাস্টার মশায়ের সঙ্গে দেখা। মাস্টর মশাযা তাকে বরাবরই খুব স্নেহ করতেন , তার অবস্থা জেনে তিনি তাকে মনের জোর না হারাতে বলেন ,এবং বললেন " তুই তোর সন্মান একদিন ঠিক খুঁজে পাবি ,আজ যারা তোকে তোর গায়ের রঙের জন্য আলাদা করে দিযেছে তারাই একদিন তোকে বুকে জড়িয়ে ধরবে " ।
শুরু হলো পারমিতার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। সে নিজের মনকে বোঝাতে লাগলো সে কালো দেখতে হলেও এক দিন সে নিজের পায়ে দাঁড়াবেই। সে আবার শুরু করলো পড়াশোনা। অনেক কষ্টের পর সে স্কলারশিপ পেলো এক বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সে তখন ডানা মেলে উড়তে শিখে গেছে নীল আকাশে। সামনে এক বিশাল আকাশের হাতছানি। বাড়ির অমত থাকা সত্বেও সে গেলো বিশ্ববিদ্যালয়তে। এই দিকে তার বাড়ি নিলামে উঠতে শুরু করযে। যারা এতদিন পারমিতা কে ঘেন্না করতো তারা আজ অসহায়। বাড়ির একের পর এক লোক বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বাড়ি আগলে পরে আছে তার ঠাকুমা। ঠাকুমার অন্তিম চিঠি পেয়ে পারমিতা আর ঠিক থাকতে পারলো না। সে বাড়িতে ফেরত এলো। যে ঠাকুমা এতদিন তাকে অসম্মান করতো নাতনিকে পেয়ে সে বুকে জড়িয়ে নিলো ।
সেই দিন হয়তো ঠাকুমার সাথে আরো অনেকেই বুজতে পারলো, যে লক্ষ্মী রূপে আসলেও সে লক্ষ্মী নয়। আজ সমাজে অনেক ক্ষেত্রে এটা দেখা যায়। আমরা আজও কারোর রূপ দেখে তার গুন্ বিচার করি, কিন্তু ভুলে যাই রূপ নয় গুনটাই তার সঙ্গে থাকবে সারা জীবন।
সময় এসেছে সমাজের চিন্তাধারাকে পাল্টানোর। চিনে নেওয়া মুখোশের আড়ালে আসল মনের মানুষ কে।
----- শ্রয়ন দে
Comments
Post a Comment