Skip to main content

যন্ত্রের জীবন


এখনও    মনে  পরে  সেই  ছোটবেলায়  বাড়িতে  টেলিফোনের  রিং  এর  আওয়াজ   সেই  মায়ের  কণ্ঠ  " ফোনটা  ধর  কেউ "। সঙ্গে  সঙ্গে  দৌড়ে  গিয়ে  ফোনটা  ধরা,   যেন  যে  ফোন  করছে  সে  আবার  ফোনটা  করতে  পারবে   না। সেই  বারে  বারে   ফোনটা  কেটে  যায় । বারে  বারে  রং নাম্বার ।ব্যাপারগুলো  আজ  ভাবলে  মনে  হয়  কত  যুগ   আগেকার  কথা। শুধু  তাই  নয়, মাসের   শেষে  বাবার  ফোনের  বিল  বেশি  আসছে  বলে  চিন্তা  করা  আর   মাঝে মাঝে ভাবা  ফোনটা কেটে  দিলেই  হয়।  

    কিন্তু  হটাৎ  করে  জীবনটা  চেঞ্জ  হয়ে  যায় । হটাৎ  যেন  জীবন  খুব  তাড়াতাড়ি  চলতে  লাগলো।  হাতে  আসলো  মোবাইল । এ  এক  যুগান্তকারি  আবিস্কার বিজ্ঞানের । আমরা  প্রথম  বার  বুঝতে   শিখলাম  বাড়ির  ল্যান্ড  ফোন  ছাড়াও  লোকের  সঙ্গে  কথা  বলা যায় । জীবন  হঠাৎ  করে  সহজ   হতে  লাগলো।কিন্তু  আজও  মনে  পরে  সেই  সময়  মা  বলতো  "নিদিষ্ট  স্থানে পৌঁছে  মিস কল  দিবি" ...   কারণ  সেই  সময়  ইনকামিং  আর  আউটগোয়িং  কলের  পয়সা  লাগতো। আজও  মনে  পরে  সেই  মিসকল  মিসকল খেলা । সে  এক   অন্য  রখম  খেলা  ছিল।

       সময়  যত এগোলো  মোবাইল  এর  ব্যবহার   দিন  দিন  বাড়তে  থাকলো ।খুব  সহজে বোঝা   যাচ্ছিলো  যে  মোবাইল   আমাদের  জীবন  এর  সঙ্গে  যেন  জড়িয়ে  যাচ্ছে । ঠিক  সেই  সময়  শুরু হলো ভারতে বিভিন্ন  মোবাইল  কোম্পানির  আনাগোনা।  সঙ্গে সঙ্গে  যেন  প্রতিযোগিতা  শুরু  হলো  কে  কত  সুবিধা  দিতে  পারে  গ্রাহক- কে ।
সঙ্গে  সঙ্গে  উঠে  গেলো  ইনকামিং  এর  উপর  টাকা  নেয়। আসলো  অনেক  নতুন  নতুন  সার্ভিস ।সেই  সঙ্গে   পাল্লা  দিয়ে  বাড়লো  মোবাইল  কেনা।সস্তা  হতে  শুরু   করলো  মোবাইল  দাম।সরকার  থেকে  পরিকল্পনা
করা  দেশে  সবজাগায়  গ্রামে   গ্রামে  মোবাইল  পৌঁছে   দেওয়া যায় কিভাবে  । সঙ্গে  সঙ্গে  শুরু  হলো  প্রচুর  চাকরির  সন্ধান  এতো  দিন  বেকার  যারা  ছিল  তারা  পেলো  এক  নতুন  জীবিকার  সন্ধান ।সঙ্গে  সঙ্গে  শুরু  হয়ে  গেলো  এক  নুতন  যুগের  সুচনা ।

     মানুষ  মানুষের  সঙ্গে  জুড়তে  শুরু  করলো  আগের  থেকে  অনেক  ভালো  করে।  দূর দূর  জায়গায়  তখন  কথা  বলা   যেত  খুব  সহজে । খুব  সহজে  দূরের   মানুষ   হয়ে  উঠলো  খুব  কাছের । মনে  হতো  না  সে  হয়তো  বসে  আছে  অন্য  কোনো  শহর   বা  দেশে।মনে  হতে  লাগলো  মোবাইল ব্যবস্থা  হয়  তো  এখানে  সীমিত  থাকবে।

        কিন্তু  আরো  অনেক  কিছু  দেয়ার    ছিল  এই  পরিষেবার ।  মোবাইল  এর বৃদ্ধির সঙ্গে  সঙ্গে  সব  থেকে  উল্লেখযোগ্য   পরিষেবা  যেটা  শুরু  হলো  তা  হলো  নেট  পরিষেবা।নেট পরিষেবা  যেন  সমস্ত  কিছু  কে  উল্টে  পাল্টিয়ে  রেখে  দিলো ।আগে  যেটা  ভাবা  যেত  না  সেই  সমস্ত  কাজ  নেট  দিয়ে  করা  যেত । মানুষ  এক  যেন  অন্য  যুগে  পৌঁছে  গেলো । শুরু  হলো  অরকুট  ফেসবুক  এবং   হোয়াটস   আপ  এর  পৃথিবী।  সোশ্যাল মিডিয়া  যেন  জীবন  কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে  রাখছে ।

     যে  পরিষেবা  মানুষ  কে  মানুষের  কাছে  এনেছিল,  সেই  পরিষেবা  ধীরে  ধীরে  দূরে  সরাতে  থাকলো  মানুষ  কে  মানুষের  মধ্যে  থেকে । আমরা  আজ  এমন  একটা  যুগ-এ  এসে  পড়েছি  যেখানে  পাশের বন্ধুকে  আমরা চিনি  না,  চিনি  অন্য  দেশের   কোনো  এক  বন্ধুকে।   আজ  আমরা  সূর্য  উদয়  আর  অস্ত  দেখতে  ভুলে  গেছি । ছবি  তুলে  সেটা কে  আপলোড  করতে ভুলি  না  কিন্তু  কখনো  নিজের  চোখ  দিয়ে  মুহূর্ত  গুলো  অনুভব  করি  না । শুধু  দৌড়ে  যাচ্ছি  অন্ধের  মতো।

জীবন  আজ  জীবন  নেই , হয়ে  গেছে যন্ত্রের  ক্রীতদাস । মানুষ  অনুভব   করতে  ভুলে  গেছে । ভুলে  গেছে  কাকে  বলে  বন্ধুর  হাতে  হাত  রাখা। যে  পরিষেবা  মানুষ  কে  মানুষের  কাছে  আনতে  শিখেছিল  সেই  আজ  মানুষ  কে  মানুষের  পাশ  থেকে  সরিয়ে  দিয়েছে । তাই  সেই  বিখ্যাত  কথা  মনে  পরে  যায়  পারমাণবিক   শক্তিতে  ভর  করে  কেউ  বোমা  বানায়  আবার  বেঁচে  থাকার  জন্য  কেউ  বিদ্যুত  বানায়। 

                                                                                                 
লেখক : শ্রয়ন দে

Comments

Popular posts from this blog

আমার বাবা - আমার ছেলেবেলা

                                            দেখতে দেখতে তেইশটা বছর পেরিয়ে গেল – বাবাকে দেখিনি, গল্প করিনি, বাবার আদরের ছোঁয়া পাইনি…… বাবার কথা বলতে গিয়েই প্রথমে মনে পড়ে তাঁর মিষ্টি হাসিটা। আমার বাবা ছিলেন একেবারে মাটির মানুষ। আমার কখনো মনে পড়েনা যে বাবা আমাকে জোর গলায় কিছু বলেছেন বা বকেছেন। ছোটবেলায় আমি আর আমার বোন সঞ্চারী বাবার কাজ থেকে ফেরার অপেক্ষায় বসে থাকতাম – কেন না বাবা ফিরে এসে একটু বিশ্রাম নিয়ে আমাদের ভূতের গল্প শোনাবেন সেই আশায়! কী যে মজার দিন ছিল সেই সব... ছোটবেলায় আমার শখ ছিল পুতুল নিয়ে খেলার, খুব ভালবাসতাম। মনে পড়ে একবার বাবা আর মা বিদেশ থেকে ফেরার  সময় একটা Walkie Talkie Doll (পুতুল) নিয়ে এসেছিলেন। আমি  সেই পুতুলটিকে নিয়ে সারাদিন খেলতাম। একদিন একটি ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে এসেছিল আমাদের বাড়িতে তার বাবামায়ের সাথে আর ওর –ও ঐ পুতুলটিকে খুব ভালো লেগে গেল। আমার নরম মনের বাবা আমাকে বললেন ‘মানা তুমি ওই বাচ্চাটিকে তোমার এই পুতুলটি দিয়ে দাও, আমি তোমাকে আবার...

আমরা তো হেমন্তই হতে চাইতাম

আজও বিকেলে মাঝে মাঝে খুব হেমন্ত শুনতে ইচ্ছে হয়..... "কোনোদিন বলাকারা এতো দূরে যেত কি "...... কিংবা "ওলির কথা শুনে বকুল হাসে ".......আজও মনে পরে "বিষ্ণুপ্রিয়া গো আমি চলে যাই ".......বা "সারাটি দিন ধরে / চেয়ে আছিস ওরে /তোর মনে কথা তবুও কেউ জানলো  না"......আকাশে মেঘ করলেই মনে পরে "মেঘের স্বপন দেখি "......শুধু একজনের জন্য।...... হেমন্ত মুখোপাধ্যায় । কখনো আবার বেশি রাতে আজও  শুনি বিবিধ ভারতীতে.... "তেরি দুনিয়া মে জিনিসে /তো বেহতর হ্যায় / কে মর যায়ে ".....আর সাথে যদি হয় 'ছুঁপালো যুঁ দিল মে প্যার মেরা " ...তাহলে তো কথাই নেই।   বাবাদের ছেলেবেলায় খুব প্রিয় ছিল " শূর্পনখার নাক কাটা যায় / উই কাটে বই চমত্কার / খদ্দের কে জ্যান্ত ধরে / গলা কাটে দোকানদার "........ মা এখনও  শুনতে চায় "ঘুম যায় ওই চাঁদ মেঘ পরীদের সাথে "......জ্যাঠার ঘরে বসে কত দুপুর কেটেছে শুধু "বসে আছি পথ চেয়ে"........ সেই কোন ছেলেবেলা থেকে শুনে আসছি "যদি জানতে চাও তুমি / এব্যাথা আমার কত টুকু / তবে বন্দি করা কোনো পাখির কাছে জেনে ...

একই সুরে কত গান

বিষয়টা খুব একটা নতুন নয়।  যদিও বেশ আকর্ষণীয়।  গান আমরা প্রায় সকলেই শুনি।  এবং এও জানি যে এমন গান আছে যা শুনলে হঠাৎ করে মনে হয় "আরে   এই গানটার  একটা হিন্দি আছে না?" বা " এই গানটার বাংলা টা  যেন কি?"  এবং এই গানগুলির বিষয়ে মানুষের এক-ধরণের স্বভাবজাত আকর্ষণ ও আছে।  তাই ভাবলাম দেখি কিছু লেখা যায় কিনা।  মজার ব্যাপার সব গান নিয়ে লেখা খুব একটা সহজ নয়।  তবুও চেষ্টা করে দেখতে গেলে ক্ষতি কি।     প্রথমেই আসা যাক সলিল চৌধুরীর গান -এ।  তিনিই এই কাজ প্রথম শুরু করেন বলেই মনে হয়।  না ভুল হলো তার আগে শচীন কর্তাও আছেন।  তবে আগে সলিল চৌধুরীকে  নিয়েই হোক।  লতাজিকে দিয়ে তিনি ৩৫টি বাংলা  আধুনিক  গান গাইয়ে  ছিলেন।  যার ২৯ খানারই অন্য ভার্সন আছে।  ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত "যারে যারে উড়ে যারে পাখি " গানটির  হিন্দি  ছিল ১৯৬১ সালে প্রকাশিত "মায়া" হিন্দি ছবির " যারে যারে উড় যারে পঞ্চী " . "যারে যারে উড়ে যারে পাখি " এর উল্টো দিকে ছিল " না যেও না" যার হিন্দি ছিল ১৯৬০ সালে...