ঘড়িতে তখন রাত সোয়া নটা,ইতিমধ্যে দুবার বেল পড়ে গেছে....
- মা,দুবার কিন্তু বেল পড়ে গেছে খেয়ে নাও এবার,ওরকম করো না আর....আমি বললাম...
- না খাবো না..
দরজাটা খুলে মুখ বাড়িয়ে আয়া দিদি বললো,লাস্ট বেল কিন্তু এখুনি পড়বে তাড়াতাড়ি করুন...
- আরে দেখুন না একটুও খায় নি এখনো...
- কেনো আজ আবার কি হলো??
- ওই এক কথা বিয়ে কর,বউমার এর মুখ দেখবো.....
- খারাপ তো কিছু বলেনি,করে নিন না বিয়েটা...
- আপনিও.....
- আচ্ছা বিয়ে নয় হবে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন আপনি সুস্থ না থাকলে বিয়ে দেখবেন কি করে.....মাকে বলে নার্স চলে গেল।
- খেয়ে নাও আর একটু.....ওষুধ গুলো আছে না শেষ...
- জানিনা...
থার্ড বেলটাও পড়ে গেল....আবার আয়া দিদি ঢুকলো....
- ছাড়ুন এবার বাকি আমি খাইয়ে দেব...
- খাবারটা সবটা খাবে আর ওষুধ গুলো খেয়ে নেবে,আমি আসলাম...
বলে কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি পিছন দিয়ে মায়ের গলা পেলাম...
- সাবধানে যাস,গিয়ে আয়া দিদির ফোনে একটা ফোন করে জানাস....
- আচ্ছা আর তুমিও সাবধানে থেকো....
বেরিয়ে দেখি লিফট বন্ধ,অগত্যা সিঁড়ি দিয়ে নামলাম,পার্কিং থেকে গাড়ি বের করার সময় ভাবলাম একবার স্নেহা কে ফোন করি,আবার ভাবলাম না থাক....হাসপাতাল থেকে যখন গাড়ি নিয়ে বেরোছি ঘড়িতে সাড়ে দশটা....
আস্তে করে রেডিও চালিয়ে,ঘরমুখো হলাম।
ফাঁকা রাস্তা,শান্ত শহর সারি সারি ল্যাম্পপোস্ট পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, ফোনটা বেজে উঠল,স্নেহার ফোন.......
'এত রাতে ফোন?কিছু হলো না তো আবার' মনে মনে বললাম।
- হম্ম বল... ফোন ধরে বললাম
- ফোন করছিলিস নাকি আমায়???
- কেন বলত..??
- না মনে হল তাই,তুই কোথায় এখন??
- বাড়ি ফিরছি রাস্তায় আছি.....
- ও,কাকিমা কেমন আছে...
- ভালো,তুই কি করছিস?
- এই ফিরলাম,ফ্রেস হতে যাবো এবার,তারপর রান্না করবো....
- কেন রান্নার লোকের কি হলো??
- দেশের বাড়ি গেছে...এক কাজ কর বাড়ি চলে আয় একসাথে খাবো..
- এখন,পাগল নাকি আবার তোর ফ্ল্যাটের লোকেরা উল্টোপাল্টা ভাববে....
- না ফ্ল্যাটে তেমন কেউ নেই,চলে আয়...
- সিওর তো...
- হ্যাঁ রে বাবা,চলে আয় আমি ফ্রেশ হতে গেলাম...
- আচ্ছা রাখ আসছি...
শামবাজারের মোড় থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে বরানাগরের দিকে চললাম.....
রাস্তা ফাঁকাই তাই পৌঁছাতে বেশি সময় লাগলো না।
ফ্ল্যাটের নীচে গিয়ে স্নেহাকে ফোন করলাম...
- নীচে আয়...
- একটু দাঁড়া আসছি...
গাড়িটাকে পার্ক করে,গাড়িতে হেলান দিয়ে সিগারেটটা সবে ধরিয়েছি তখুনি ফ্ল্যাটের গেট খোলার শব্দ হলো,চটজলদি সিগারেটটা মাটিতে ফেলে পা দিয়ে নিভিয়ে দিলাম।
- সিগারেটটা খাওয়া ছাড়বি না তাই তো...বেরিয়েই বলে উঠল স্নেহা
- দেখ খাওয়া অনেকটা কমিয়েছি...
- খাবার কারণটা যে কি সেটাই বুঝি না....
- বুঝবি না অনেক চাপে পড়ে খেতে হয়....
- কি যে ওতো চাপ বুঝিনা...উপরে চল...
দুজনে ফ্ল্যাটে ঢুকে সিড়ি দিয়ে উঠতে থাকলাম...আমি ফোনটা বের করতেই ও বলল..
- সারা দিন শুধু ফোন আর ফোন...
- মা কে ফোন করছি....ওকে.....
..হ্যালো,হ্যাঁ মা কে ফোনটা দাও,মা আমি বাড়ি যাই নি,স্নেহার ফ্ল্যাটে এসেছি, তুমি ওষুধ খেয়েছো তো,আচ্ছা বেশী রাত করোনা ঘুমিয়ে পড়ো.....আচ্ছা রাখলাম।
- কে ফোন ধরেছিল??ও বলল
- আয়া বোধহয়, ভ্রু কুঁচকে বললাম।
ইতিমধ্যে ওর ঘরের সামনে পৌছালাম,দরজাটা খুলে ও বলল,
- আয়,আগে ফ্রেশ হয়ে নে.....চা খাবি না সরবত??
- জল দে একটু,আমি বললাম।
ও ফ্রিজ থেকে একটা বোতল বের করে বললো
- নে,তোয়ালে দেবো??
আমি এক নিঃশ্বাসে ঢকঢক করে জলটা খেয়ে তোয়ালেটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম......
মিনিট পাঁচেক পর ওর গলা পাওয়া গেলো...
- কি খাবি বল??
- তুই ভাত আর আলুসেদ্ধ বসিয়ে দে ব্যাস আর কিছু লাগবে না....আমি বললাম।
- আচ্ছা তাড়াতাড়ি বের হও খিদে পেয়েছে.....
বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি ও থালায় ভাত বাড়ছে....
- এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেল!!!
- গোবিন্দভোগ চালের ভাত....তোর প্রিয় তো....
- তোকে জাস্ট চুমু,দাঁড়া চেঞ্জ করে আসছি...
- তবে আমারও একটা কথা আছে,বলে ও আমার পিছনে ছুটতে ছুটতে এসে ঘরে ঢুকল....
আমি চুলটা আঁচড়াতে আঁচড়াতে জিগ্যেস করলাম...
- কি কথা....
- আমাকে খাইয়ে দিতে হবে,অনেকদিন খাইয়ে দিসনি...
আমি হাসতে হাসতে বললাম,
- আচ্ছা তাই হবে চল...
ডাইনিং টেবিলে এসে ও বাচ্চাদের মতো চেয়ারে বাবু হয়ে বসল,আগে যেমন করে বসত আর আমি ওর সামনে থালাটা হাতে নিয়ে একটা চেয়ারে বসলাম,ওর মাথার দুদিকে দুটো ঝুঁটি বাঁধা সেগুলোকে নাড়িয়ে বলল...
-তাড়াতাড়ি খাওয়া,কুত্তা জাইসি ভুখ লাগি হে....
- দাঁড়া ভাতটা ঠান্ডা হোক একটু....
- না,না,না আমি এখুনি খাবো....ও হাত পা ছুঁড়ে বায়না শুরু করে দিলো।
অনেক দিন পর ওকে এভাবে দেখছি বেশ ভালো লাগলো,এখন ওর এই বাচ্চপনা গুলোই খুব মিস করি।
ভাতটা কোনো মতে মেখে ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে খাওয়াতে শুরু করলাম..
- নুন দে নুন কম....
- থাক বেশি নুন খেতে হবে না...
মুখটা ভেংচে দিল।
ঝগড়াঝাটি,ধমকাধমকি এসবের মধ্যে দিয়ে খাওয়াটা শেষ হলো....
হাত মুখ ধুয়ে সোফায় বসেছি,ও ছুটে এসে আমার পাশে বসে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল,আমি ওর এই হাসিটার মানে জানি কোনো শয়তানি করার আগে ও এরম করে হাসে.....
- কি হলো?আমি বেশ ভয়ের সাথে বললাম..
ও কানের পাশে এসে আস্তে আস্তে বলল...
- বিয়ার খাবি??
- এখন,বারোটা বেজে গেছে সব কাউন্টার বন্ধ....
- আরে না না আমার ফ্রিজে আছে....
- মানে,তুই এখন বিয়ারও খাস??
- আরে না কাল এনেছিলাম শখ করে কিন্তু মুড হয়নি....
- আচ্ছা.....
- কি আচ্ছা?চল ছাদে যাবো..
- এখন?কেন?
- চল না,আমার হাতটা টেনে ধরে ফ্রিজের কাছে গিয়ে দুটো বিয়ার ক্যান বের করে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে চলল।
ছাদে গিয়ে ও প্রথমেই ধপ করেবাবু হয়ে বসে পড়ল ওর দেখা দেখি আমিও,ও বিয়ারের ক্যানটা খুলে প্রথম চুমুক দিতেই,
- থু,থু কি তেতো....লোকে খায় কি করে ওগুলো...
আমি হাসতে লাগলাম,তা দেখে ও আরও ক্ষেপে গিয়ে বলল...
- হাসার কি হলো,এক চুমুকেই নেশা হয়ে গেল নাকি তোর....
আমি তা শুনে আরও জোরে জোরে হাসতে লাগলাম....ও আমার পিঠে দুম দুম করে দুটো কিল মেরে বললো...
- মাতাল শালা....বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল।
আমিও হাসি থামিয়ে বিয়ারে চুমুক দিতে দিতে আকাশের দিকে চেয়ে থাকলাম।
কিছুক্ষন সব চুপচাপ,তারপর ও নিজে থেকেই বলল...
- কাকিমা কিছু বলল না যখন বললি যে আমার ফ্ল্যাটে এসেছিস..
- না কি বলবে....
- না আগে কাকিমা যখন শুনতো তুই আমার সাথে আছিস খুব রেগে যেত,আর এখন....বলে ও হাসতে লাগলো...
- মা ও বুঝতে পেরেছে যে আমি মা ছাড়া যদি কারো কাছে ভালো থাকি তবে সে তুই....
- হ্যাঁ,আমিই শুধু বুঝলাম না....
- সেটা নয় তুই আমাকে যেভাবে রিজেক্ট করেছিস আমি তার জন্য তোর কাছে থ্যাংকফুল....
- রিজেক্ট? কিভাবে??ও গালে হাতে বলল...
- তুই বলে ছিলি না যে,''আমি তোকে ভালোবাসি কিন্তু কোনো দিন আপন করতে পারবো না"সেটাই আর কি...
- তুই এখনো কষ্ট পাস আমার জন্য তাই না....
ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে বললাম....
- আরে ছাড় না ওসব.....লেটস concentrate অন বিয়ার....চোখটা ছলছল করে উঠেছিল,কিন্তু তা লুকিয়ে হেসে উঠলাম।
কিছুক্ষণের জন্য সব নিস্তব্ধ,ঘুমন্ত শহরের নিশ্বাসের শব্দটাও যেন শুনতে পেলাম আমরা।বিয়ারটাই যেন সব মুশকিল আসান এভাবে বিয়ারটাকে আঁকড়ে ধরে আকাশের দিকে চেয়ে থাকলাম,অনেকক্ষন।
তারপর সব নিস্তব্ধতা ভেঙে ও বলে উঠল...
- ছোটবেলায় কত ভালো ছিলাম রে,কারো কাছে কোনো জবাবদিহি করতে হতো না মন খুলে বাওয়াল দিতাম....
- কেন তখন তো খুব বলতিস বড় হই একটা চাকরি পাই সব ঠিক হয়ে যাবে.....
হেসে উঠলো ও,ওর হাবভাব দেখে যতদূর বুঝলাম ওর নেশা হয়ে গেছে...তাই আমি আর দেরি না করে বললাম...
- চল নীচে চল কালতো অফিস আছে আবার.....
- ধুর বস তো,ভালো লাগছে বেশ.... বলেই চোখ বড়বড় করে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো...
- আমার নেশা হয়ে গেছে বলে কি তুই আমাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে কিছু করতে চাস..... আমি কিন্তু ক্যারাটে জানি....
আমি হেসে ফেললাম,বললাম
- তোর তাই মনে হয়....
- না,তাও.....বলে আমার কোলে মাথাদিয়ে শুয়ে আবার বলতে লাগলো.....
- তুই না খুব ভালো,কিন্তু বোকা....
- মানে??
- এই যে কাজ নেই কর্ম নেই আমার পিছনে পরে আছিস, দেখছিস যখন পাত্তা দিচ্ছি না চলে যা না....
- আমি চলে গেলে তুই থাকতে পারবি তো....
ও বাচ্চাদের মতো মুখ করে বলল...
- না.....
জানিনা কি হলো ও হঠাৎ আমায় জাপটে ধরল,ঠিক আগের মতো করে,সেই পুরোনো গন্ধটা ফিরে পেলাম...ওর বুকের ধকধক শব্দটা যেন অনেক কিছু বলে দিল...
নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম...
- আচ্ছা ছাড় এবার,অনেক আদর হয়েছে....
- না ছাড়বো না বলে ও আরো খানিকক্ষণ জড়িয়ে থাকল....
তারপর একসময় নিজে থেকে ছেড়ে দিল...
- ওই শোন না একটা কবিতা বল না...
- এখন,মদ খেয়ে কবিতা বেরোবে না রে....
- কেনো আগে তো বেশ বলতিস....
- "আগের আমি পাল্টে গেছি
আসল নকল তফাৎ ভুলে
ভুল গুলো ভোকাট্টা আজ
হোঁচট খাইনা একলা চলে"
- বাহ!!তালিয়া তালিয়া....বলে নিজেই দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে লাগল....তারপর খানিকক্ষন ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে থেকে আবার বলে উঠল.....
- ওই শোন না,তুই তো আমার অনেক ইচ্ছে পূরণ করেছিস,আর একটা করবি...বলে আমার হাতটা ধরে টেনে তুলে দিল....
- বল কি ইচ্ছে,চেষ্টা করবো পূরণ করার.....
- আমার অনেক দিনের শখ বুঝলি তো যে কেউ আমাকে মদ খেয়ে,মদের বোতল দিয়ে প্রপোজ করবে....
- মাথাটা পুরো খারাপ হয়ে গেছে....বললাম আমি।
- ওই কর না প্রপোজ,বলে একটা ক্যান আমার হাতে ধরিয়ে দিল...
- চেষ্টা করছি দাঁড়া,বলে হাঁটু গেড়ে বসলাম,অনেকদিন পর বলে বেশ কষ্ট হল,তারপর ওর হাতটা ধরে.....
- এটা ভালোবাসা কিনা জানি না কিন্তু যখন তুই আমার সাথে থাকিস পাটিগনিতের জটিল সরল গুলোও সহজ হয়ে যায়,জীবনে অন্ধকার জায়গা গুলোতেও আমি আলোর ছটা দেখতে পাই,তুই না থাকলে কেমন যেন শ্বাসকষ্ট হয় মনে হয় ঠিকঠাক অক্সিজেনটা পাচ্ছি না,তুই আমার লাইফের অনুঘটকের মতো তুই থাকলে লাইফের বিক্রিয়া গুলো যেন easily হয়...যদি এটা ভালোবাসা হয় তো তোকে আমি ভালোবাসি,বড্ড ভালোবাসি.....তারপর একটু থেমে বলে উঠলাম....
"অহঙ্কার তুমি এই জীবনের
কলঙ্ক আমি তোমার
যাবজ্জীবনের কয়েদি হলাম
দিব্বি রইল আমার"
- ব্যস কার পাগলে রুলায়গে কেয়া,বলে হাসতে লাগল,ওর হাসিটায় কোথায় যেন একটা সরলতা খুঁজে পেলাম....
কথাগুলো ওর নেশাতুর মনে কতটা ছুঁলো জানিনা,কিন্তু সাধারণ অবস্থায় ও সত্যিই কেঁদে ফেলতো.....
- কি ভাবছিস?ও একটা ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করল...
নিজের মধ্যে একটু হারিয়ে গেছিলাম,সম্বিৎ ফিরতেই হঠাৎ বলে ফেললাম....
- বিয়ে করবি আমায়??
- হ্যাঁ,নেশার ঘোরে হাসতে হাসতে বলল...
আমিও হেসে ফেললাম।
- চল নীচে যাই,অনেক রাত হলো....বললাম আমি
- চল যাওয়া যাক....বলে আমায় হাতটা ধরে তুললো...
সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় বলল...
- ওই কোলে করে নিয়ে চল না...আগের মতো..
- না পারবো না....বললাম আমি.
- ওরম করছিস কেন বাবু....বলে আমার গলা ধরে ঝুলে পড়ল...
কোলে নিলাম,সিঁড়ি দিয়ে কয়েক ধাপ নামার পর আবার বলে উঠল...
- কষ্ট হচ্ছে বাবু??
- হ্যাঁ,মোটা হয়ে গেছিস...
- নামিয়ে দে তবে....
- না থাক....ঘরের সামনে এসে থামলাম...দরজা টা খোল...
- আগে তো নামা নীচে....
- না,তুই দরজা খোল আগে....
ও আমার কোল থেকেই দরজাটা খুললো,ভিতরে ঢুকে আমি পা দিয়ে দরজাটা ঠেলে দিলাম,তারপর ওকে নিয়ে সোজা ওর বেডরুমের বিছানায় নিয়ে ধপ করে ফেলে দিলাম.....
- আউচ্,কি হলো এটা....ও বললো...
আমি হাসতে থাকলাম....
- পাগল একটা....ও হাসতে লাগল...
ওর গায়ে একটা চাদর দিয়ে দিয়ে বললাম...
- ঘুমিয়ে পড়...আসলাম...
- কোথায় যাচ্ছিস??
- তুই এখানে ঘুমো,আমি ড্রইং রুমে শোবো.....
আঁকড়ে ধরল ও হাতটা আমার,ওর তাকানো টা যেন কেমন একটা লাগল....বলল,
- এখানেই শুয়ে পর,বাইরে যেতে হবে না…..
আমি একটু ইতস্তত করে বললাম...
- না থাক....
ও হঠাৎ করে উঠে গলাটা জড়িয়ে ধরল,ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট আবদ্ধ করল,এই প্রথমবার ওর ঠোঁটের স্বাদ পেলাম....এক অদ্ভুত মাদকতার উষ্ণতায় হারিয়ে গেলাম,গায়ে একটা শিহরণ খেলে গেলো।
ওর ঠোঁটটা যেন বাধ্য করল,পাশে শুয়ে পড়তে....সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারলাম না,সারারাত কোনো কথা হয়নি মাঝে ও শুধু একবার বলে ছিল...
- আমায় ছেড়ে যাস না যেন...
এক অদ্ভুত অস্বস্তিতে হচ্ছিল।
ভোরের দিকে আবার ছাদে গেলাম,বেশ ভালো লাগছিলো,অনেক দিন পর সূর্য ওঠা দেখলাম....ঠান্ডা হাওয়ায় মনটা শান্ত হয়ে গেল...অনেকক্ষন ছাদে থাকলাম তারপর নীচে নেমে আসলাম।
ও তখনও ঘুমোছিলো....ওর চোখে মুখে এক শান্ত প্রশস্তি দেখলাম,খুব ভালো লাগল।
আমি আর দেরী করলাম না সোজা বাথরুমে গেলাম,চান করে বেরোতে হবে অফিসের জন্য।
বেরিয়ে এসে দেখি ও আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলছে..
- সুপ্রভাত ম্যাডাম,ঘুম হলো....
- হম্ম মর্নিং,একটু কফি করে দে না....ও হাই তুলতে তুলতে বলল..
- আচ্ছা দাড়া...
আমি রান্নাঘরে ঢুকলাম,ও ব্যালকনিতে গেল...
দু কাপ কফি বানিয়ে ব্যালকনিতে গেলাম...
- নিন ম্যাডাম...
- থ্যাংকু,থ্যাংকু....
- আচ্ছা শোন আমি কফিটা খেয়েই বেরিয়ে যাবো...অফিসে যেতে হবে.....
- কেন???
- অফিসে মানুষ কেন যায়....
ও হাসতে লাগল...
কফিটা শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম,ও ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল,ওর মুখের হাসিতে সকালের আলোটাও যেন স্লান লাগছিল....বেরিয়ে পড়লাম।
তারপর দু তিন দিন খুব ব্যস্ত ছিলাম অফিসের কাজে ওর সাথে তেমন কথা হয়নি,তিন দিন পর একদিন দুপুর বেলায় অফিসে কাজ করছি এমন সময় ফোনটা বেজে উঠল,দেখি হাসপাতাল থেকে ফোন এসছে....বুকটা ধক করে উঠল,মা ঠিক আছে তো....কাঁপা হাতে ফোনটা ধরলাম,ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে গলা ভেসে এলো...
- মি.দাস??
- হ্যাঁ,বলুন....
- আমরা দিশা হাসপাতাল থেকে বলছি,আপনার মায়ের অবস্থা খুব খারাপ আপনি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসুন...
- হ্যাঁ,আসছি কিন্তু মায়ের কি হলো,কাল রাতেও তো ঠিক ছিল....
- আপনি আসুন তাড়াতাড়ি...
অফিস থেকে প্রায় ছুটতে ছুটতে বেরোলাম,গাড়িটা নিয়েই সোজা হাসপাতালের দিকে ছুটলাম,রাস্তায় দুবার স্নেহা কে ফোন করেছিলাম,কিন্তু ওর ফোন ব্যস্ত বলল.....গাড়িটা কোনোমতে পার্ক করে ছুটলাম,লিফটের সামনে গিয়ে দেখি স্নেহা ভিতরে দাঁড়িয়ে,
- তোকে কে বলল...হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম...
- ফোন করেছিল হাসপাতাল থেকে,বলে ব্যাগ থেকে জলের বোতলটা বের করে আমায় দিল....
ঢকঢক করে জলটা খেয়ে নিলাম কিন্তু তাও হাঁপাতে লাগলাম,মনটা ছটফট করতে কোনো বিপদের আশঙ্কায়।
- চাপ নিস না,সব ঠিক হয়ে যাবে...ও মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো....
লিফট থেকে বেরিয়ে দুজনেই উর্ধ্বশ্বাসে ছুটলাম মায়ের রুমের দিকে....দরজাটা খুলেই....
- মা...বলে ডেকে থমকে গেলাম দুজনেই কিছুক্ষনের জন্য....
দেখি মা দিব্বি বসে আছে বেডের উপরে পাশে কয়েক জন নার্স দাঁড়িয়ে....আমি মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম....
- থাক আর কাঁদতে হবে না,তারপর স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলল..দেখছো তো বউমা আমার ছেলেটা বড্ড ছিচ্ছকাঁদুনে,এরপর থেকে কিন্তু তোমাকেই সামলাতে হবে এই পাগলটাকে...
আমি,স্নেহা দুজনেই থমকে গেলাম মা এভাবে তো কখনো কথা বলে না।
আমি এবার রেগে গিয়ে বললাম...
- এভাবে বাতিব্যস্ত করার কোনো মানে হয়....
মা হেসে বলে উঠল,
- বাতিব্যস্তর কি দেখলে বাছাধন,সবে তো শুরু,আগে আগে দেখো হোতা হে ক্যায়া....
আমি আর স্নেহা দুজন দুজনের মুখচাওয়া চাওয়ি করলাম....
মা এবার দরজার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
- ওগুলো নিয়ে এসো...
দেখি দুজন ওয়ার্ড বয় হাতে মালা আর টোপর নিয়ে ঢুকল...পিছনে একজন ক্যামেরা হাতে ঢুকল...মা আবার বলল...
- দরজাটা বন্ধ করে দেয় যাতে পালাতে না পারে....
- এসবের মানে কি??আমি বলে উঠলাম
মা এক ধমক দিয়ে বলল,
- চুপ একদম কথা বলবি না চুপটি করে টোপর আর মালাটা পর...অনেকদিন ধরে তোকে বলছি কিন্তু তুই তো কথা কানেই নিছিস না তাই এই ব্যবস্থা....
একজন ওয়ার্ড বয় এগিয়ে এসে দাঁত বেরকরে বলল..
- নিন দাদা মালাটা নিন...
আমি তাকে এক ধমক দিয়ে বললাম....
- ধুর রাখো তো তোমার মালা,তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম...আর মা তোমারও কি কোনো আক্কেলজ্ঞান নেই এইভাবে কেউ....আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু দেখি স্নেহা মুচকি হেসে মালাটা নিয়ে নিলো...
আমি হা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম,স্নেহা বলল,
- আর দেরি করে লাভ নেই চল বিয়েটা করেই নি....
নার্সদের উলু আর ফরমাল শার্ট প্যান্টের উপরেই টোপর মালা পড়ে বিয়ে হলো আমাদের।।।
লেখক :- অর্ণব দাস
Comments
Post a Comment